মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ৫০ শর্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি হাজারো সমস্যায় জর্জরিত থাকায় চিকিৎসা সেবা ভেঙ্গে পরেছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক সংকট, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, যন্ত্রপাতি অপ্রতুলতা, ওয়ার্ডে পানি সংকট, এবং ৫ বছর অতিবাহিত হবার পরেও (অস্ত্রোপচার) অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম চালু করা হয়নি। ৩১ শর্য্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও অবকাঠামো দিয়ে চলছে ৫০ শর্যার কার্যক্রম । ফলে এলাকার হাজার হাজার মানুষকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে চরম দুভোর্গ পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ঘিওর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৬২ সালে ৩১ শর্যা বিশিষ্ট কার্যক্রম শুরু হয়। গত ৬ বছর আগে ৫০ শর্যায় উন্নত্তিকরন করা হয়। অত্যাধুনিক ৫০ শর্যার জনকাঠামো অনুযায়ী চিকিৎসকদের ২৫টি পদের বিপরিতে এখানে কর্মরত আছেন মাত্র ৮জন চিকিৎসক । এর মধ্যে ডেপুটিশনে রয়েছে ৪জন। মাত্র ৪জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও কাজকর্ম। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারী), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (নাক কান গলা), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (চক্ষু) পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এ ছাড়া অ্যানেসথেসিয়াসহ সহকারী সার্জনের নয়টি পদ খালি রয়েছে। ২০১৯ সালে ২য় তলায় অপরেশনের জন্য ৪টি রুম উদ্ধোধন করা হলেও মুখ থুবরে পরে আছে। ৫০ শর্যার নতুন ভবনটিতে অপারেশন ফিয়েটার থাকলেও অ্যানেসথেসিয়ার যন্ত্র অপারেশন টেবিল, অক্সিজেন সিলিন্ডারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। দুঃখ জনক হলেও সত্য, ৩১ শয্যার অবকাঠামে অনুযায়ী ও জনবল সংকট বহু দিন ধরে। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু) পদের বিপরীতে একজন সার্জন দায়িত্ব পালন করছে। জুনিয়র কনসালট্যান্ট মেডিসিন) এবং দন্ত্র চিকিৎসকের (ডেন্টাল সার্জন) পদ দুটিও শুন্য রয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, জ্বর ও ঠান্ডা জনিত রোগে বেশির ভাগ শিশুরা আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে শিশু রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন। এছাড়া বহিঃ বিভাগ ও জরুরি বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ২শ থেকে ৩শ রোগী সেবা ও পরামর্শ নিতে আসে। ৬০/৬৫ জন রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন। প্যাথলজি বিভাগে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান নেই। নোংরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হয়। মাত্র একজন টেকনোলজিষ্ট দিয়ে পরীক্ষা- নিরীক্ষা চলছে। ইসিজি ও আলট্রাস্নোগ্রাম মেশিন নেই। প্রসূতি মায়েদের সিজার করার কোন ব্যবস্থা নেই। রক্তের দু তিনটি পরীক্ষা ছাড়া বেশির ভাগ পরীক্ষা নিরীক্ষা ঢাকা -মানিকঞ্জ থেকে করতে হয়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় শিশু রোগীদের । নবজাতক শিশু ও ডাইরিয়া আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা কোন ওয়ার্ড নেই। ওয়ার্ডের ফেন গুলোর অবস্থা খুবই করুন। মশারি, চাদর, বালিশ ও কম্বল গুলোর দুর্গন্ধে রোগীরা ব্যবহার করতে পারেনা। প্রসাব, পায়খানাগুলোর দুর্গন্ধে ও নোংরা থাকে। জ্বর, মাথা ব্যথাসহ প্রাথমিক রোগে আক্রান্ত বহু রোগীদের ঢাকা- মানিকগঞ্জে পাঠাতে হয়। সরকারি একটি এ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হলেও মুমুর্ষ রোগীদের ঢাকা পাঠাতে হলে অধিকাংশ সময় ড্রাইভার পাওয়া যায়না। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভীতরে ড্রেন আর্বজনা পরিস্কার না করায় মশা- মাছির বংশ বিস্তার হচ্ছে।
২০১১ সালে মুঠো ফোনে জরুরী স্বাস্থ্য সেবা চালু করে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের গাফলতির কারনে তেমন প্রচার নেই। জরুরী স্বাস্থ্য সেবা নিতে ০১৭৩০৩২৪৫০৯ নম্বর মুঠো ফোনটি অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে। অধিকাংশ চিকিৎসকরা সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করে নিজেদের ইচ্ছামত অফিসে আসা যাওয়া করেন। কিছু চিকিৎসক আছেন তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমানে প্যাথলজিতে বসে প্রাইভেট রোগী দেখেন। অনেকে ওষুধের দোকানে বসে আড্ডা দেন। অনেকে হাজিরা খাতায় সহি করে চলে যান বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ ডাঃ হাসিব আহ্সান বলেন,আমাদের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে চিকিৎসকসহ জনবল সংটের কারনে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। তবে সীমিত জনবল দিয়ে এলাকার রোগীদের সাধ্যমত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। তবে শূন্যপদগুলো পূরন হলে সঠিকভাবে চিকিসাসেবা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে চিকিৎসকসহ অনান্য জনবলের চাহিদার জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত ভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।