উপজেলা প্রতিনিধি | শনিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২১ | প্রিন্ট
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় সার সংকটের গুজব রটিয়ে বাজারে নৈরাজ্য তৈরি করেছে একটি অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। সারের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে কৃষকদের নিকট থেকে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ওই চক্রটি। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন এই উপজেলার অন্তত চল্লিশ হাজার কৃষক।
এছাড়া কৃত্রিম সার সংকটের কারনে ফসলের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিগত দুই-তিনদিন ধরে স্থানীয় বাজার গুলোতে ঘুরে দেখা যায় সার সংকটের অজুহাতে চাষীদের লুটছে ওই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। অথচ উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাদের সেদিকে নজর দিতে দেখা যায়নি।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন সার নেই। তবে দাম বেশি দিতে চাইলেই কেবল মিলছে সার। কিছু কিছু ডিলারের দোকানে সারের মূল্যতালিকা টাঙানো থাকলেও বেশিরভাগ ডিলারের দোকানে সরকার নির্ধারিত সার বিক্রয় মূল্য তালিকা টাঙানো নেই। সরকারি মূল্য তালিকাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বেশী দামে সার বিক্রয় করা হচ্ছে। প্রতিবস্তা ইউরিয়া সরকার নির্ধারিত দাম ৮০০ টাকার স্থলে বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৫০টাকা, ১১০০ টাকার টি,এস,পি ১২০০ থেকে ১২৫০টাকা, ৭৫০টাকার এম,ও,পি ৯০০টাকা ও ৮০০ টাকার ড্যাপ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায়। দাম নেই বলে জানান তারা।
এদিকে উপজেলা বাজারের সার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম কাজী এর নিকট থেকে কৃষক আমিনুল ইউরিয়া সার কিনতে গেলে প্রতিকেজি সার ১৬ টাকার পরিবর্তে ১৮ টাকা দাবী করলে কৃষক আমিনুল তার কথার প্রতিবাদ করে এবং সরকার নির্ধারিত ১৬ টাকা দাম দিতে চাইলে সার না দিয়ে ১৮ টাকা না দিলে সার নাই বলে জানান। পরে বাধ্য হয়ে তিনি প্রতিকেজি সার ১৮ টাকা দাম দিয়ে কিনেন। তবে, রশিদ চাইলে তাকে দেওয়া হয়নি বলে জানান ঐ কৃষক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা জানান, কতিপয় ডিলার-ব্যবসায়ী ও খুচরা সার বিক্রেতাদের সমন্বয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মূলত তারাই সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইউরিয়া, টিএসসি, ডিএপিসহ সব ধরণের সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রতি বস্তা সারে ইচ্ছে মাফিক দামে কৃষকদের কাছে বিক্রি করছে। এভাবে প্রভাবশালী ওই সিন্ডিকেটটি মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মিশন নিয়ে মাঠে রয়েছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
বাজারে সার বেশি দামে বিক্রি হওয়ার বিষয়টা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম কে জানালে তিনি বিষয়টি জানেন না বলে জানান। সার মনিটরিং টিমের নিকট থেকে নিয়মিত তথ্য নেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফোনে কথা না বলে তার অফিসে দেখা করতে বলেন তিনি ।
তবে, এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ডিলার ও সার ব্যবসায়ীরা বলেন, বাপার গোডাউন থেকে চাহিদার তুলনায় সার সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই সারের এই সংকট তৈরি হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের কোনো হাত নেই। এছাড়া সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কোনো বাড়তি টাকায় সার বিক্রি করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তারা।
তাছাড়া উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে ১৪ জন বিসিআইসির ডিলার থাকলেও হোগলবাড়িয়া, মথুরাপুর, আদাবাড়িয়া, ফিলিপনগর ছাড়া কোন ইউনিয়নে ডিলারদের কোন অস্তিত্ব খঁজে পাওয়া যায়নি।
একাধিক সুত্র জানিয়েছে, এসকল ডিলারগণ দৌলতপুর উপজেলার বাইরে কুষ্টিয়া, কুমারখালী ও রাজবাড়িতে অবস্থান করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জাব্বার এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সবেমাত্র এই উপজেলায় যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। খুব দ্রæত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
Posted ৬:২২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২১
Desh24.news | Azad
.