| রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ | প্রিন্ট
প্রধানমন্ত্রী বলেন‘ আমরা যারা রাজনীতি করি, আমাদের ক্ষমতার চেয়ার আর কারাগার খুব পাশাপাশি থাকে। রোববার (২৭ ডিসেম্বর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে মহিলাদের জন্য আলাদা ভবন, ২০টি ফায়ার স্টেশনসহ ৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও কেরানীগঞ্জে একটি এলপিজি স্টেশন উদ্বোধন করে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তবে ২০০৭ সালে যেটা হয়েছে, সবার আগে কিন্তু আমাকেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। কাজেই সেটা আমরা জানি, রাজনীতি করতে গেলে এটা করতেই হবে। এজন্য আমরা কারাগারগুলো উন্নত করে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় কারাগারে নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেটা আমরা উদ্বোধন করেছি।
কারাগারগুলোতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেরানীগঞ্জের কারাগারেও ইতোমধ্যে কোর্টরুম তৈরি করা হয়েছে। এভাবে জেলা কারাগারগুলোতেও কোর্টরুম চালু করা হবে। অনলাইনের মাধ্যমে মামলাও পরিচালিত হবে। এখন করোনার সময় সরাসরি কোর্ট চালানো মুশকিল। তাই আমরা ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যবস্থা করেছি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘প্রত্যেকটি আইন ডিজিটালাইজ করে ফেলা হচ্ছে। যেকোন মামলার কজ লিস্ট যেটা থাকবে সেটাও অনলাইনে জানা যাবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সব কাজ যেন আরও সুন্দরভাবে-সুষ্ঠুভাবে হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
মামলার রায় বাংলায় ছাপাতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মামলার রায় ইংরেজিতে বের হয়, সেটাকে বাংলা করে ছাপানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কারাগারকে সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো কারাগারে শুধু অপরাধীদের বন্দী করে রাখা নয়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন করা, তাদের কিছু প্রশিক্ষণ দেয়া, তাদের কিছু শিক্ষা দেয়া, যাতে তারা বের হয়ে ভবিষ্যতে একই অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারাগারে যারা গ্রেফতার হয়ে যায়, তাদের পরিবারগুলো কষ্ট পায়। তারা অপরাধ করে অপরাধী। কিন্তু তারপরও তাদের পরিবারগুলো কষ্ট পায়। এতগুলো মানুষ বেকার বসে থাকবে কেন? সেজন্য সেখানে তাদের ট্রেনিং করানো, কিছু পণ্য উৎপাদন করানো এবং তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাজারজাত করার ফলে যে টাকা আসবে খরচ রেখে (লাভের ৫০ ভাগ) বাকিটা যে উৎপাদন করবে সে পাবে। সে তা নিজে জমাও করতে পারবে, কিছু অংশ পরিবারকেও পাঠাতে পারবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা কারাগারে কতগুলো পরিবর্তন এনেছি। আমাদের কারারক্ষীদের কোন ট্রেনিং ছিল না, তাদের নিরাপত্তারও কোন ব্যবস্থা ছিল না। এমনকি তাদের থাকারও ভালো ব্যবস্থা ছিল না। নতুন কারাগারে সেই ব্যবস্থাগুলো নেয়া হয়েছে। আমরা কারাগারগুলোর উন্নতি করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কারাগারে যারা যাবে, রাজবন্দী বাদে যারা কোন অপরাধ করে যায় তাদের ট্রেনিং দিয়ে যথাযথ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে আমরা ছেড়ে দেব।
সংগ্রামী জীবনে বঙ্গবন্ধুর বারবার জেল খাটার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু অপরাধ করলেই যে জেলে যায় তা না। ১৯৪৮ সালে যখন আমাদের মাতৃভাষা বাংলার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল, তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিবাদ করেছিলেন, সেই প্রতিবাদের কারণে কারাগারে যেতে শুরু করেন। তারপর তার জীবনের অনেকটা সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে অত্যন্ত মানবেতরভাবে।
বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কারাগারে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ?‘কারাগারের সঙ্গে সব সময় আমাদের একটা সম্পর্ক। ছোটবেলা থেকেই কারাগারে যাই, সেখানকার ভালোমন্দ অনেক কিছু জানারও সুযোগ হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনগুলো হচ্ছেÑ নওগাঁর রানীনগর, মৌলভীবাজারের রাজনগর, রাজশাহীর মোহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, পাবনার সাথিয়া ও আটঘরিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, শরীয়তপুরের জাজিরা, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, বগুড়ার শাহজাহানপুর ও আদমদীঘি, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও কলারোয়া, নেত্রকোনার বারহাট্টা, বরিশালের হিজলা, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, পিরোজপুরের ইন্দুরকানী, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা ৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর, বাগেরহাট, মাদারীপুর, নেত্রকোনা ও নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত।
ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুনে জীবন ও সম্পদের অনেক ক্ষতি হয়। ‘আমাদের সরকার গঠনের আগে এত ফায়ার স্টেশন ছিল না। আমরা দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। পৃথক বার্ন ইনস্টিটিউট করেছি, মানুষের জীবন যেন নিরাপদ হয় সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
যেসব ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- নওগাঁ জেলার রানীনগর, রাজশাহীর মোহনপুর, পাবনার সাথিয়া ও আটঘরিয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা, বগুড়ার আদমদিঘি ও শাজাহানপুর, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও কলারোয়া, বরিশালের হিজলা, পিরোজপুরের ইন্দুরকানি, মৌলভিবাজারের রাজনগর, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, নেত্রকোনার বারহাট্টা, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ।
ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৯৯-এ ফোন দিলে যেকোন ধরনের সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। সম্প্রতি হিমছড়িতে একদল শিক্ষার্থী হারিয়ে যাওয়ার পর ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ বিমানবাহিনীর সাহায্য নিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ থেকে বোঝা যায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে যেকোন বিপদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করা যায়। আমরা ফায়ার সার্ভিসকে সেভাবে গড়ে তুলব।
Posted ১০:৪১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২০
Desh24.news | Azad