মেহেদী হাসান,ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: | শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩ | প্রিন্ট
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৭ নং শিবনগর ইউনিয়নে ভিডব্লিউবি’র চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়েরম্যান সামেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুর সাড়ে ১২টায় ভিডব্লিউবি’র চাল বিতরণের সময় সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন উপকারভোগিরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে,উপজেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট (ভিডব্লিউবি) প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ২হাজার ১৫৮জন দরিদ্র উপকারভোগী নারীদের তালিকাভুক্ত করে সঞ্চয় জমাদানের মাধ্যমে মাসে একবার ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নে ৪৪০ জন নারীকে মে মাসের চাল বিতরণ করা হয়। কিন্তু প্রত্যেক উপকারভোগির কাছে ২২০ টাকা সঞ্চয় আদায় করা হলেও,কার্ডে জমা করা হয়েছে ২০০টাকা। অতিরিক্ত ২০ টাকা জমা করা হয়নি। কী কারণে অতিরিক্ত ২০ টাকা নেয়া হচ্ছে? জানেন না উপকারভোগীরা। কোন কোন উপকারভোগি বলছেন, চৌকিদারের খরচ বাবাদ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান সামেদুল ইসলামের নির্দেশে এই টাকা নেয়া হচ্ছে।
উপকারভোগি আমিরন নেছা, কার্ড নং-৪/৮৫, জান্নাতুল ফেরদৌস-৪/৯,রোজিনা,ওছিমন আরা,নার্গিস বেগম,ফারজানাসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন,আমরা ৫ মাস ধরে এই চাল উত্তোলন করছি। প্রতি মাসে চাল উত্তোলন করতে ২২০ টাকা করে জমা নিয়ে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের কাছে থাকা সঞ্চয় কার্ড বা বহিতে সঞ্চয়ের ঘরে ২০০ টাকা করে জমা করা হয়, অতিরিক্ত ২০ টাকা জমা হয়না এবং তার কোন হিসেব নেই। কী কারণে এই অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় তাও আমরা জানি না। তবে শুনেছি এই অতিরিক্ত ২০ টাকা চেয়ারম্যান সামেদুল ইসলামের নির্দেশে চৌকিদারে খরচ বাবদ তোলা হয়।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার দুপুরে শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদের গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়ন পরিষদের একপাশে ইউপি সচিব ও মেম্বার বসে মাষ্টারোলে টিপ সহি নিচ্ছেন উপকারভোগিদের কাছে। অন্যদিকে ব্যাংকের প্রতিনিধিরা বসে উপকারভোগিদের কাছ থেকে কার্ড জমা নিয়ে ২২০ টাকা করে নিচ্ছেন। সে সময় দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার এবং ইউপি চেয়ারম্যানের দেখা মেলেনি,খোঁজ করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এসময় অতিরিক্ত ২০ টাকার কথা জানতে চাইলে শিবনগর ইউনিয়নের সচিব প্রদীপ কুমার অধিকারী বলেন, এ বিষয় আমি কিছু জানি না, চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলললে জানতে পারবেন। ব্যাংক প্রতিনিধিরা বলেন, চেয়েরম্যানের নির্দেশেই তারা অতিরিক্ত ২০ টাকা নিচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে ট্যাগ অফিসার উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সোহানুর রহমান সুমন মুঠোফোনে জানান, চাল বিতরণের বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে চাল উত্তোলনের পর বিতরণের সময় সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের জানানোর কথা থাকলেও তিনি আমাকে জানায়নি।
এদিকে ঘটনা জানাজানি হলে শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়রম্যান সামেদুল ইসলামের সাথে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মিরা মুঠো ফোনে কথা বললে, তিনি বলেন, চাল বিতরণে চৌকিদারসহ সহযোগীদের খরচ বাবদ ওই অতিরিক্ত ২০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে নেয়া হয়, তাই আমিও নিচ্ছি। তবে উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর বিষয়টি অবগত নন। এটি নেয়ার কোন নিয়মও নেই, তবে আনঅফিসিয়ালি নেয়া হচ্ছে।
পরবর্তীতে মুঠো ফোনে কথা বললে তিনি ভিন্ন কথা বলেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে জানান, আগে ২০০ টাকা করেই নেয়া হতো। উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নির্দেশে ২২০ টাকা নেয়া হচ্ছে। এবিষয়ে কোন লিখিত চিঠি অছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,মৌখিকভাবে তারা বিষয়টি জানিয়েছেন,তবে চিঠি দিয়েছিল কিনা দেখতে হবে। তিনি বলেন,উপকারভোগিদের বইয়ে ভুলবশত ২০০ টাকা করে জমা করা হয়েছে, ব্যাংক একাউন্টে ২২০ টাকা করেই জমা করা হবে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রীতা মন্ডল জানান,উপকারভোগিদের কাছ থেকে ২২০ টাকা করে নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। তবে বইয়ে ২০০ টাকা করে জমা করার বিষয়টি চেয়ারম্যানের হেয়ালিপনা,এটা ঠিকহয়নি। চেয়ারম্যানের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই ব্যাংক স্টেটম্যানের সাথে মিলিয়ে দেখা হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ জাফর আরিফ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, এব্যাপারে চেয়ারম্যানকে সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে এ রকম অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Posted ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩
Desh24.news | Azad
.
.