বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ

রাসেদুল ইসলাম, মোহনপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি   |   শনিবার, ২৮ আগস্ট ২০২১ | প্রিন্ট  

শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ

আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত’। শিশুকে যত্ন নিয়ে সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশের সুযোগ করে দিলে ভবিষ্যতে সে আদর্শ কর্মদক্ষ ও সুযোগ্য নাগরিক হবে। শিশুরা খেলতে পছন্দ করে আর বিভিন্ন খেলা থেকেই শুরু হয় শিশুর মানসিক বিকাশ। খেলার ছলে দ্রুত শিক্ষালাভের মাধ্যমে তাদের মনোসামাজিক বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে আতঙ্কিত একটি শব্দ তা হল করোনাভাইরাস। এটি এমন এক ভাইরাস যা স্তব্ধ করে দিয়েছে পৃথিবীর প্রাণচাঞ্চল্য।

 


চীন দেশে কোভিড-১৯ এর প্রথম উৎপত্তি হলেও বাংলাদেশে ৮ই মার্চ, ২০২০ সালে এই ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরপর থেকে দেশের মানুষদের সংক্রমন বিস্তাররোধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে। দিচ্ছেন লকডাউন, বিধিনিষেধ। মাঝে মাঝে সংক্রমণ কম হলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দিলেও শিশুদের সুরক্ষার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অদ্যবধি বন্ধ হয়েছে।

 

করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বাড়ী হতে বের হতে দিচ্ছে না। ফলে শিশুরা পূর্বের ন্যায় খোলা মেলা ভাবে খেলাধূলা করতে পারছে না প্রায় দেড় বছর যাবৎ। দীর্ঘদিনের শিশুরা আবদ্ধ অবস্থায় থাকায় তাদের সকল ধরনের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একটা শিশু যখন হাঁটতে শেখে, কথা বলতে, দৌড়াতে শেখে, ছবি আঁকে, নাচে এইসব জিনিস শিশুর বিকাশের একটা বড় অংশ। শিশুর সকল ধরনের বিকাশ, বুদ্ধির বিকাশ এই পরিস্থিতিতে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়ায় শিশুদের খেলাধূলা ও সময় কাটানোর জন্য আরেকটা শিশুর সাথে মিশার ভীষণ প্রয়োজন।

 

একাধিক অভিভাবক জানান, করোনা মহামারির প্রকোপে দীর্ঘদিন স্কুল, কোচিং ও প্রাইভেট বন্ধ থাকায় শিশুদের পড়াশোনার প্রতিদিনের রুটিং একদম ভেঙ্গে পড়েছে। বাড়ীতে মায়েরা অনেক চেষ্টা করেও বই নিয়ে পড়ার টেবিলে বসাতে পারছে না। সারাক্ষণ টিভিতে কাটুন দেখা আর স্মার্ট ফোনে গেম চালানো। দীর্ঘ সময় ঘরে থাকার কারনে বাচ্চাদের বিকেলে বাহিরে যেতে বললেও তারা খেলাধূলায় আগ্রহী হচ্ছে না। মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর পড়ুয়া ছাত্র শুভজিত কুমারের মা সোনালী রানী সিং বলেন, বিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার পর থেকে বাচ্চাকে অনেক কৌশল করেও পড়াতে বসাতে পারিনা।

 

তিনি বলেন, শহর অঞ্চলে কিছু স্কুল অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও গ্রামের শিশুরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি টেলিভিশনে পাঠদান অনুষ্ঠান হলেও অনেকে তা জানেনই না। এতদিন স্কুল বন্ধ থাকায় সেশন জট তৈরি হবে। স্কুল যখন শুরু হবে, যেসব পড়াশোনা হয়নি সেটা নিয়ে শিশুরা হিমশিম খেয়ে যাবে। তাদের উপর চাপ তৈরি হবে।”করোনাভাইরাস প্যান্ডেমিক শুরু হওয়ার পর থেকে শিশুরা এমনিতেই মানসিক চাপে ভুগছে। স্কুল নেই, বন্ধুদের সাথে দেখা নেই, খেলা নেই, ঘরের চার দেয়াল ছাড়া কোথাও বেড়াতে যাওয়ার উপায় নেই।

 

রাজশাহী কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিতাই কুমার সাহা বলেন, বাংলাদেশের শতকরা ৮০ ভাগ লোক গ্রামে বাস করে। পরে কর্মজীবনের তাগিদে গ্রাম ছেড়ে অনেকেই শহরবাসী হয়। কিন্তু গ্রামে বেড়ে ওঠা মানুষরা তার শৈশব স্মৃতি কে হৃদয়ে ধারন করে পরমযত্নে। শৈশবে সেই গ্রামীন খেলাধূলার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা দুরন্তপনার দিনগুলি একজন ব্যক্তি মানুষের জীবন স্মৃতির বড় অংশ হয়ে ওঠে। বয়স পেরিয়ে গেলে একদিন মানুষরা শৈশবের সেই দিনগুলো কে কাছে ফিরে পেতে মাঝে মাঝেই স্মৃতি কাতর হয়ে ওঠে।

 

সময়ের পরিক্রমায় শিশু বয়সের সেই শৈশব জীবনের চিরচেনা অধ্যায়ের কেড়ে নিচ্ছে করোনা। শৈশব জীবনের দুরন্তপনার দিনগুলি গ্রাস করছে করোনা। এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক শিশু স্বাস্থ্য বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা: মো: ইকবাল বারী বলেন, শিশু, শৈশব, শিক্ষা, খেলাধূলা এগুলো উন্নত জাতি গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের কাছে বিষয়গুলো মহামারির জন্য বাধ্য হয়ে উপেক্ষিত হচ্ছে শিশুরা। সংকটপূর্ণ সময়ে আমাদের অভিভাবকদের আরো বেশি সন্তানদের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।

 

শিশুদের দীর্ঘ সময় চার দেয়ালের মাঝে রাখলে তার শারীরিক ও বুদ্ধির বিকাশে বাধাপ্রাপ্ত হবে। এ সময় শিশুদের বাবা-মাকে তাদের বন্ধু সুলভ আচরণ করা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিকেলে মাস্ক পরিয়ে নিরাপদ স্থানে সাথে নিয়ে গিয়ে বাবা খেলাধূলা করবেন। এবং পাশাপাশি শিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে। এ সময় শিশুদের বেশি ফলমুল বিশেষ করে টক জাতীয় ও শাক সবজি খাওয়াতে হবে। কারন আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার।

 

Facebook Comments Box

Posted ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৮ আগস্ট ২০২১

Desh24.news |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
এম আজাদ হোসেন সম্পাদক ও প্রকাশক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

শ্রীসদাস লেন,বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০/ ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

হেল্প লাইনঃ +৮৮০১৯১১৪৭৭১৪১/০১৯১১২২৭৯০৭

E-mail: infodesh24@gmail.com