ডেস্ক রিপোর্ট | মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
“ফারজানা ইয়াসমিন”
সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি), শাকরাইল উচ্চ বিদ্যালয়, শিবালয়, মানিকগঞ্জ।
করোনা মহামারীর তান্ডবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ দীর্ঘ দিন বিকল্প পাঠদান ব্যবস্থা হিসেবে অনলাইন পাঠদান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এতে করে শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্দেশনা আসে সংসদ টিভিতে প্রচারিত ক্লাসগুলো দেখার জন্য এবং বিদালয়ের শিক্ষকগণ দ্বারা পরিচালিত অনলাইন ক্লাসগুলো, মোবাইল ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে অংশগ্রহন করার জন্য। অনেক অভিভাবক অনিচ্ছা স্বত্বেও তার সন্তানের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য এনড্রয়েড মোবাইল ফোন কিনে দেন। কেননা তারা পর্যবেক্ষন করেছেন দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তাদের সন্তানেরা বই বিমূখ বা অলসতায় জীবন যাপন করছে।
দেখা-গেছে প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থী মোবাইল ফোন হাতে পেয়ে খুবই আনন্দের সহিত প্রথমাবস্থায় অনলাইন পাঠদানে অংশ গ্রহণ করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা গেছে অভিবাবকগণ অলাইন ক্লাস শেষে হবার পর, শিক্ষার্থীর নিকট থেকে মোবাইল ফোন জমা নেননি বা শিক্ষার্থীরাও অযুহাত দেখিয়ে বাবা- মায়ের কাছে ফোনটি জমা দেয়নি। ইন্টারনেট সংযোগ থাকায় তারা অনলাইনে বিভিন্ন বিণোদনমূলক কার্য্যক্রমের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন ধরনের অনলাইন গেম বা নিষিদ্ধ ওয়েব সাইটগুলোতে বাধাহীন পরিদর্শন করেছে। যে কারণে প্রথম অবস্থায় অনলাইন ক্লাসগুলোতে মনোযোগ দিলেও পরবর্তীতে, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই আর অংশ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। মোবাইল ফোনের প্রতি ভয়াবহ এই আসক্তি তাদেরকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে? দেখা যাচ্ছে খেলার মাঠে যেখানে শির্ক্ষীদের একত্রে খেলাধুলা করে অবসর কাটানোর কথা , সেখানে দল বেঁধে মোবাইল ফোনের গেমসগুলোতে মগ্ন হয়ে আছে। যে শিক্ষার্থীর বিকেল বেলা বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট, কাবাডি খেলে সময় কাটানোর কথা, সেখানে সে চুপচাপ মোবাইল ফোন নিয়ে ঘরের কোণে অথবা একাকী নির্জনে সময় কাটাচ্ছে।
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষৎ। দেশের ভবিষৎ কর্ণধার। কিন্তু বর্তমানে এই মোবাইল ফোনের প্রতি প্রবল আসক্তি কি ভবিষ্যৎ বয়ে আনবে? কোথায় নিয়ে যাবে দেশের ভবিষৎ- কর্ণধারদের কে? এই দূরবস্থা কাটিয়ে উঠার জন্য এখনই সময়, নয়তো অনেক দেরি হয়ে যাবে।
মোবাইল আসক্তির ভয়াবহ এ প্রবণতায় বিশেষ করে উঠতি বয়সি ছেলেমেয়েরা বর্তমান পরিস্থিতিতে এক বিরাট সংকটকাল অতিক্রম করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গবেষকরা এই ভয়জনিত অসুখের নাম দিয়েছেন ‘নোমোফোবিয়া’। যুক্তরাজ্যের এক গবেষনায় দেখা গেছে, মোবাইল অতিমাত্রায় ব্যবহারের কারণে চোখের জ্যোতি আনুপাতিক হারে কমে যাবে, কানে কম শুনবে, আর এ বিষয়টি নির্ভর করবে , সে কানের কতটুকু কাছাকাছি এটি ব্যবহার করে, উচ্চ শব্দে গান শুনে কি না? এ ছাড়াও শরীরের
অস্থিসন্ধিগুলোর ক্ষতি হতে পারে। কমে যেতে পারে শুক্রাণু। মোবাইল ফোন থেকে হাই ফ্রিকোয়েন্সির ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয়। এই ক্ষতিকর তরঙ্গের সঙ্গে মস্তিষ্কে ক্যানসারের যোগসূত্র থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে শিক্ষক, অভিভাবক এমন কি সমাজকেও সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থী তার দিনের ৬ ঘন্টা সময় অতিবাহিত করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এই ৬ ঘন্টা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কঠোর বিধি নিষেধের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা যেতে পারে। প্রত্যেক সচেতন অভিভাবককে তার শিক্ষার্থীর অনলাইন পাঠ গ্রহন শেষ হলে মোবাইল ফোন নিজের আয়ত্তে রাখতে হবে। সমাজের সৃজনশীল মানুষগুলোর ভূমিকাও এক্ষেত্রে কম নয়। রাস্তার পাশে বসে থাকা বা খেলার মাঠে বসে থাকা শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে মগ্ন থাকা টিকে প্রতিরোধ করতে হবে।
যোগাযোগ মাধ্যমের সর্বাধুনিক সহজ প্রযুক্তি হচ্ছে মোবাইল ফোন। বিজ্ঞানের এই আবিষ্কার এড়িয়ে চলবার উপায় নেই। তাই এর ব্যবহার অনিবার্য। তবে অপব্যবহার যেন না হয়, দিনকে দিন যাতে ছেলেমেয়েরা এর প্রতি আসক্ত বা ঝুঁকে না পড়ে, সেদিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরি। এর ভয়াবহতা বা আসক্তি থেকে ছেলেমেয়েদের দূরে রাখতে হলে তাদের হতে তুলে দিতে হবে আকর্ষণীয় বই, পত্রপত্রিকা ও বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা ও বিনোদন মূলক ম্যাগাজিন। যোগাযোগ ঘটাতে হবে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। সবার স্বত:স্ফূর্ত সহযোগিতায় সম্ভব এ ভয়াবহ ব্যাধি থেকে এই ছাত্র সমাজকে মুক্ত করা। এই আসক্তি থেকে শিক্ষার্থী তথা আগামী দিনের ভবিষৎকে একটি সুন্দর জীবন উপহার দেয়া। যাতে করে দেশ পাবে তার সঠিক কর্ণধার।
Posted ৮:২৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর ২০২২
Desh24.news | Azad
.