আজিজুর রহমান, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি | সোমবার, ২৩ আগস্ট ২০২১ | প্রিন্ট
চলতি মাসের ৯ আগষ্ট রাতের কোন এক সময়ে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন অসহায় হত দরিদ্র ভ্যান চালক লাভলু ফকির (৪০), নিহত লাবলুর দুই মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রী ও বাবা-মা রয়েছে। নিহত লাবলু একাই ছিল ঐ পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। লাবলু নিহত হবার পর সংসারের বোঝা যেন অনেক বড় হয়ে উঠে। গ্রামবাসির সহায়তায় কয়েকদিন যাবত চলছিলো কোন মতে।
নিহত লাভলুর ছোট মেয়ে মারিয়া আক্তারের (৩) বামহাতের নিচে বোগলের টিউমারও সাপ্তাহিক কিস্তি যেন গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছিলো। এই টিউমার দেখে মানবিক হৃদয় আরও মানবিক হয়ে উঠে সালথা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসিকুুজ্জামানের। খোঁজ খবর নিয়ে তিনি লাবলুর ছোট মেয়ের টিউমার অপারেশন করার বন্দোবস্ত করেন এবং চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ, আটা, নুডুলস, সাবান, মিনি সাবান, মাস্ক সহ খাদ্য সামগ্রীর একটি প্যাকেট নিহত লাভলুর স্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
সরেজমিনে গিয়ে নিহত লাবলু ফকিরের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লাবলুর বাড়ি ঘরের অবস্থা বেশি ভাল না, এনজিও থেকে লোন করে ব্যাটারী চালিত অটোভ্যান চালিয়ে সংসার চালান, বাবা-মা সহ পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকমে চলছিল তার সংসার। লাবলু ফকির ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হবার পরেই গ্রামবাসিদের সাহায্য নিয়ে কোন মতে চলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
মামলা সংক্রান্ত কাজে ছোট মেয়েকে নিয়ে থানায় গেলে বাচ্চাটার টিউমার নজরে পড়ে সালথা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসিকুজ্জামানের। তাৎক্ষনিক তিনি নিহত লাবলুর স্ত্রী হনুফা বেগমকে মেয়ের চিকিৎসা বাবদ পাঁচ হাজার টাকা দেন। এর কয়েকদিন পরে আবার অপারেশন করার জন্য নগদ অর্থও প্রদান করেন। সেই টাকা নিয়ে পুনরায় হাসপাতালে গিয়ে মেয়ের অপারেশনের বন্দোবস্ত করেন।
নিহত ভ্যানচালক লাভলুর স্ত্রী হনুফা বেগম জানান, ওসি স্যার অনেক ভাল মানুষ, স্যার আমার অসুস্থ্য মেয়েকে দেখে কিছু টাকা দেয়, খোঁজ খবর নিয়ে মেয়ের ডাক্তার দেখানোর জন্য আবার টাকা দেন। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল স্যার জানতে পেরে খাদ্য সামগ্রী দিয়েছেন, স্যারের জন্য দোয়া করি।
সালথা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসিকুজ্জামান বলেন, মানুষ হিসেবে আমরা অনেক সময় দায় এড়াতে পারি না। নিহত লাভলুর ছোট মেয়ের কষ্ট দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে, তাই চেষ্টা করেছি ওর চিকিৎসার জন্য কিছু করার। বর্তমানে পুলিশ মানবিক পুলিশ হিসেবে কাজ করছে, পারিবারিক শিক্ষা থেকেই আমি মানুষকে সব সময় সাহায্য সহযোগিতা করি। আপনারাও পারলে মানুষের পাশে দাড়ান আত্মতৃপ্তি পাবেন।
উল্যেখ্য, গত ৯ আগষ্ট রাতে ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হয় উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের হোসেন ফকিরের ছেলে লাভলু ফকির (৪০), হত্যা মামলা দায়েরের ৫ দিনের মধ্যে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৫জন কে আটক করে পুলিশ। এমন একটি ক্লুলেস হত্যান্ডের রহস্য উন্মোচন ও জড়িত থাকার অভিযোগ ৫ জনকে আটক করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
Posted ৪:৫৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৩ আগস্ট ২০২১
Desh24.news | Azad
.