শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

দরিদ্রদের কাজের তালিকায় ইউপি সদস্য-স্ত্রী-ভাইয়ের নাম

মোঃ জুলহাস মোল্লা কলাপাড়া প্রতিনিধি   |   বুধবার, ১০ মে ২০২৩ | প্রিন্ট  

দরিদ্রদের কাজের তালিকায় ইউপি সদস্য-স্ত্রী-ভাইয়ের নাম

 

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থানের (ইজিপিপি) আওতাধীন ৪০ দিনের কর্মসূচিতে রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিকের তালিকায় নিজের ও স্বজনদের নাম দেওয়া এবং খননযন্ত্র দিয়ে কাজ করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিন ইউপি সদস্য।


 

এ নিয়ে ৩০ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন সুবিধাভোগীর তালিকায় থাকা বঞ্চিতরা।

 

 

অভিযুক্তরা হলেন- পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাস্বার ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুর ইসলাম, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিদ্দিক হওলাদার এবং ৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য মোসা. কুলসুম আক্তার।

 

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ধুলাস্বার ইউনিয়নের চর-গঙ্গামতির বাদলের বাড়ি থেকে ফরেস্ট অফিস হয়ে পাকা রাস্তার মাথা পর্যন্ত এবং কাউয়ারচর বটতলা থেকে সাগরপাড় পর্যন্ত রাস্তা মেরামত বাবদ এ প্রকল্পের আওতায় দরিদ্রদের দিয়ে কাজ করানোর কথা। যার বরাদ্দ হয় ২০ লাখ টাকা।

 

কিন্তু শ্রমিকের তালিকায় নিজের নাম দিয়েছেন প্রকল্পের সভাপতি ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. সিদ্দিক হাওলাদার। তার স্ত্রী মোসা. মরিয়ম বেগম ও ছোট ভাই মো. কবির হাওলাদারের নাম তালিকায় দেওয়া হয়। তবে বেশকিছু দিনমজুরের নাম তালিকায় থাকলেও তারা জানেই না ওই কাজ তাদের করার কথা কিংবা তালিকায় তাদের নাম আছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাস্তা দুটি চার-পাঁচ মাস আগে অভিযুক্ত ইউপি সদস্যরা খননযন্ত্র দিয়ে রাস্তার পাশ থেকে বালু তুলে মেরামত করেছে। তবে এটা যে নতুন কর্মসংস্থান যোগাতো সাধারণ মানুষের প্রাপ্য সেই খবর কেউ জানতেন না। কিন্তু তালিকা হাতে পাওয়ার পর সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

 

 

সুবিধাভোগীর তালিকায় ৫১ নম্বরে থাকা পাপিয়া বলেন, ‘ছয়-সাত মাস আগে নারী মেম্বার একজন সিম বিক্রেতাকে সঙ্গে নিয়ে আমার বাড়ি আসেন। আমার হাতের টিপসই নিয়ে যান আর বলেন- সিমে কৃষি নামে টাকা আসবে, পরে সিম দিয়ে যাওয়া হবে। এরপর আর কোনো খোঁজ নেই। এখন শুনি সেই নামে আমরা নাকি দৈনিক ৪০০ টাকা বেতনে কাজ করেছি। এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।’

 

 

৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৃষক আলমগীর বলেন, ‘আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র মেম্বাররা চাইলে দিয়ে দেই। কিন্তু আমাদের তো কিছু বলে না। এখন শুনি আমরা রাস্তায় কাজ করে একেকজন ১৬ হাজার টাকা করে পেয়েছি। অথচ আমরা এর কিছু জানি না, সঠিক তদন্ত করে এর বিচার চাই।’

 

সুবিধাভোগীর তালিকায় থাকা সুজন নামের এক কৃষক বলেন, ‘এ রাস্তা গত কয়েকমাস আগে ভেকু দিয়ে করানো হয়েছে। এটা এলাকার সবাই দেখেছে অথছ এখন দেখি এখানে নাকি আমি কাজ করেছি। সেই লিস্টে ৫৫ নম্বরে আমার নাম। শুধু আমি না এলাকার অনেক অসহায় মানুষের নাম দিয়ে টাকা তুলে নিয়েছে ওয়ার্ডের মেম্বাররা। আমরা ডিসির কাছে অভিযোগ দিয়েছি। সাধারণ গরিব মানুষকে ঠকানো হয়েছে এর সঠিক বিচার চাই।’

 

এ বিষয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘রাস্তার মাটি কাটার সময় কিছু জায়গায় পানি থাকার কারণে আমরা অল্প কিছু কাজ ভেকু দিয়ে করিয়েছি। তবে তালিকায় আমার, আমার স্ত্রী ও ছোট ভাইয়ের নাম আমি দেইনি। ইউনিয়ন পরিষদের কেউ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এ নামগুলো দেওয়া হয়েছে। আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি।’

 

৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুর ইসলাম  বলেন, ‘রাস্তার কাজ কিছু ভেকু দিয়ে করানো হয়েছে আর কিছু শ্রমিক দিয়ে করানো হয়েছে। সবাই মাটি কাটার কাজ করে না তাই আমরা নামে-বেনামে তালিকা করেছি। কারা অভিযোগ করেছে তা জানা নেই।

 

এ বিষয়ে প্রকল্পের সদস্য সচিব ও নারী সদস্য মোসা. কুলসুম আক্তার বলেন, এ কাজে পুরোপুরি না একটু অনিয়ম হয়েছে। যেখানে মাটি ছিল না সেখানে ভেকু দিয়ে কাজ করানো হয়েছে। আর আমি কাজের কাছে ছিলাম না। ছিল দুই মেম্বার। আমার নামে সিম আনার কথা মিথ্যা। তবে যারা এগুলো বলছে তারা নির্বাচনী প্রতিপক্ষ।

 

ধুলাস্বার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফেজ আব্দুর রহিম বলেন, আমি সবসময় কাজের কাছে থাকতে পারিনি। তবে কাজ মোটামুটি হয়েছে দেখে স্বাক্ষর করেছি। তবে এখানে অনিয়ম হয়েছে আর কিছু জায়গায় পানি থাকার কারণে ভেকু দিয়ে কাজ করেছে তারা।

 

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ কাজ অতিদরিদ্রদের জন্য। কোনোভাবেই ভেকু দিয়ে করার সুযোগ নেই। যদি দায়িত্বে যারা ছিল তারা করে থাকে তাহলে আইনের আওতায় আনা হবে।

Facebook Comments Box

Posted ৭:১২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১০ মে ২০২৩

Desh24.news |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
এম আজাদ হোসেন সম্পাদক ও প্রকাশক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

শ্রীসদাস লেন,বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০/ ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

হেল্প লাইনঃ +৮৮০১৯১১৪৭৭১৪১/০১৯১১২২৭৯০৭

E-mail: infodesh24@gmail.com