ডেস্ক রিপোর্ট | বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট
মোঃ খায়রুল ববাশার (মিঠু),ঈশ্বরদী (পাবনা)প্রতিনিধি
প্রায় দুই বছর এগারো মাসে নির্মাণাধীন রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত ১৭ জন রাশিয়ান নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল হতে ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বিগত বছরের ফেব্রুয়ারী হতে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এক বছরে ৮ জন রাশিয়ানের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ২জন দুর্ঘটনায় মারা যায়। তবে গত ২৬ জানুয়ারী হতে ৬ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ১২ দিনে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছে। সাম্প্রতিক সময়ে ৫ জনের মৃত্যু কাকতালীয় বলে পুলিশের পক্ষ হতে জানানো হয়েছে। বেশীরভাগই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করলেও জলবায়ূ পরিবর্তন, খাদ্য অভ্যাস, লকডাউন এবং নিঃসঙ্গতাকে কেউ কেউ কারণ হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান আসাদ ১২ দিনে ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনাকে কাকতালীয় বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ম্যাক্সিম শাকিরভ রাতে তার ফ্লাটে ঘুমিয়েছিলো সকালে আর উঠেনি। ২৬ জানুয়ারী মৃতদেহ উদ্ধার করে জানা যায়, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ২৮ জানুয়ারী আলেক্সেই বারচেনকা অসুস্থবোধ করলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হলেও ভিসেরা রিপোর্টের জন্য রাজশাহী পাঠানো হয়েছে। ৫ জানুয়ারী ২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে ভিয়াচেস্লাভ তলমাচেভ পা পিচলে ১৪তলা ভবন থেকে নীচে পড়ে যায়। এটি নিছক দুর্ঘটনা বলে তিনি জানান। আরেকজন পাভেল চুকিন পরিবারসহ বাস করতেন। দীর্ঘদিন তার হার্টের সমস্যা ছিলো। সর্বশেষ আলেক্সান্দার ভারোতনিকভ মস্তিস্কে রক্তক্ষরণে মারা যান। তিনি নিয়মিত ভেষজ জাতীয় ওষুধ খেতেন। ভেষজ ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় তার মৃত্য হয়েছে বলে প্রকল্পে কর্মরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এছাড়াও দুর্ঘটনাজনিত কারণে কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা এবং বয়স্ক ব্যক্তিও মৃত্যুর তালিকায় রয়েছে।
ওসি আরো বলেন, পরিবার-পরিজন ছেড়ে এসব বিদেশীরা নিঃসঙ্গভাবে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। করেনা পরিস্থিতির কারণে এদের চলাফেরায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আগে বাইরে বের হলেও এখন হাট-বাজারেও যেতে দেয়া হয় না।
সাম্প্রতিক মৃত্যুর ঘটনা প্রসংগে পাবনা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা: শারমিন স্বপ্না বলেন,পোষ্টমর্টেমের পর ভিসেরা রিপোর্টের জন্য রাজশাহীতে পাঠানো হয়েছে। ভিসেরা রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
ঈশ্বরদী পৌরসভার মেয়র ইসাহক আলী মালিথা বলেন, রাশিয়ানরা শীতপ্রধান দেশের মানুষ। জলবায়ুর তারতম্যের সাথে খাদ্যভ্যাসেরও বিষয়ও রয়েছে। শীতপ্রধান দেশে যে ধরণের খাদ্য গ্রহন করা হয়, সেধরণের খাবার এখানে গ্রহন করলে শারিরীক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চলাফেরায় বিধিনিষেধের কারণে এখন রাশিয়ানরা গৃহবন্দির জীবন-যাপন করছে। আগে স্থানীয় স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্ট ও পাকশী রিসোর্টে সুইমং পুলে সাঁতারকাটা এবং বেড়ানোর জন্য তাদের অবাধ যাতায়াত থাকলেও এখন বিধিনিষেধ আরোপ করায় একেবারেই নিঃসঙ্গ জীবন-যাপন করতে হচ্ছে।
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে মৃত্যুবরণকারী রুশ এমপ্লয়ীদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে জেএসসি এটমস্ত্রয়এক্সপোর্ট (রসাটম রাষ্ট্রীয় কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা)। রসাটম প্রেরীত এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমারা সর্বদা এমপ্লয়ীদের আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচনা করি এবং তাদের জীবন ও কল্যানকে আমরা সর্বোচ্চ অগ্রাধীকার দিয়ে থাকি।
সম্প্রতি স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে এই সকল মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী এসকল ঘটনার পিছনে সন্দেহজনক কিছুই পাওয়া যায়নি। এই মুহুর্তে প্রত্যেকটি মৃত্যুর কারন উদঘাটন করতে তদন্ত পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষকে আমরা সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি।
চুড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পাবার পর এজাতীয় দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে স্থানীয় ও বিদেশী সকল পার্টনার, স্টেকহোল্ডার, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় সকল ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।##
Posted ৮:৪৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২
Desh24.news | Azad
.
.