প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর বদলে দিয়েছে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জীবনধারা। স্বপ্ন পূরন হয়েছে এই অঞ্চলের অসহায় দরিদ্র মানুষের। রঙ্গীন ও টেকসই মজবুত ঘর পেয়ে আনন্দে কাটছে এখানে বসবাসরত লোকজনের। সরকারের এই বিশেষ উদ্যোগ পাকাবাড়ি ও জমি পাওয়া সুবিধা বঞ্চিত মানুষগুলো অনেক খুশি।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, আশ্রয়ন প্রকল্পের লোকজন ভাল আছেন। তারা বাড়ির সাথে পেয়েছেন সবজী চাষ করার জমি। বাড়িতে বিদ্যুত, বিশুদ্ধ পানি, পাকা টয়লেট, যা তাদের শুধু স্বপ্ন ছিল। আশ্রয়ন প্রকল্পে শাররীক, মানসিক, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা, ভিক্ষুক, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্টিদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন। বসবাসরত অসহায় মানুষগুলো ঘুরে দাড়াচ্ছে। বদলে যাচ্ছে তাদের জীবন যাত্রার মান।
জোকা আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারী নাট্য শিল্পী ছায়া রানী বলেন, ছোট বেলায় বাবা মারা যাবার পরে গনেশ অপেরা অভিনয় শিখেছি। ১শ থেকে ২শ টাকা বেতনে অভিনয় করতাম। প্রায় তিন শতাধিক নাটকে কত রকমের অভিনয় করেছি। কখন রানী, কখনও মা, কখনও ডাকাত আবার কখনও বাইজী চরিত্র অভিনয় করেছি। রেডিও, টেলিভিশনে অনেক নাটক প্রচার হইছে। আমাগো নিজস্ব জমি ছিলনা। রাস্তার পাশে ছাপরা ঘরে থাকতাম। বিয়ের পরে দুই জনেই অভিনয় করতাম। আমার স্বামী বয়সের কারনে অভিনয় করতে পারেনা। একটি চায়ের দোকান করতো। বয়সের ভারে চা দোকান চলে না। একটা মাত্র সন্তান আমাগো ছাইরা চইলা গেছে। শেষ বয়সে এসে প্রধানমন্ত্রী দেওয়া উপহারের ঘরে আমাগো আশ্রয় হইছে। পাকা ঘরের রাতে আরামে ঘুমাইতে পারি। ঘরের পাশে জায়গাটিতে লাউ, শিম, পেপে, ধুন্দল, বেগুন আবাদ করেছি। এখানে সবজী চাষ করে পরিবারের খাওয়া এবং বিক্রি করে বাড়তি আয়ও করতে পারছি। আমাদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। সংসার এখন ভালই চলতাছে। হাত তুইলা প্রার্থনা করি ভগবান যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সারা জীবন বাচাইয়া রাখে। এছাড়া রুপা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও রিপন অন্ধ প্রতিবন্ধী। তাদেও ২জনকে ২টি ঘর দেওয়া হয়েছে। জমি ও ঘর পেয়ে তারা বেজায় খুশি। মাইলাগী গ্রামের তিন সন্তানের জননী সীমা রানী সরকার জানান, আগে ঘিওর পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর চড়ে ৮টিনের ছাপরা ঘরে পরিবারের লোকজন নিয়া বহু কষ্টে দিন কাটাইতাম। বৃষ্টির সময়ে ছাপরা ঘর দিয়া পানি পরতো। বন্যার সময়ে স্কুলের আশ্রয় কেন্দ্রে থাকতো হতো। ছেলে, মেয়ে স্বামী নিয়া বহু কষ্ট করতে হইছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমারে একটি ঘর দিছেন। অভাবের সংসার আমি কখনও কল্পনাও করিনি আমার ভাগ্যে এত সুন্দর একটি ঘর জুটবে। আমি পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভাল আছি। বড়টিয়া ইউনিয়নের করজনা আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দা সবরা বেগম,গোপাল শেখসহ ৮টি পরিবারের লোকজন জানান, আগে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়ে ভাঙ্গাচোরা ঘরে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমাদেও দিনরাত কাটাতে হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘর পেয়ে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাই হয়েছে। আমি নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আশ্রয়ন প্রকল্পের সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, ঘিওরে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় ঘিওরে মোট ১০৫টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। ১০৫টি ঘরে মোট ২১ কোটি ৫৬লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ২৫টি ঘরের জন্য প্রতিটি ঘর ১ লাখ ৭১ হাজার, ২য় পর্যায়ে ৫০টি ঘরের জন্য প্রতিটি ১ লাখ ৯০ হাজার এবং ৩য় পর্যায়ে প্রতিটি ঘরের জন্য ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার জানান, ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার পূর্নবাসনের মতো একটি মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নে শেষ হয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের লোকজন পরিবারের লোকজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারে । এই জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানায়।