আব্দুর রাজ্জাক, (মানিকগঞ্জ ) | মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে অবশেষে বিলীন হয়ে গেল ব্রীজ ও ৫শ মিটার পাকা রাস্তা। উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের বৈলট-জাবরা সড়কের কোশুন্ডা এলাকায় নির্মিত এই ব্রীজ টি ধ্বসে পড়ায় যোগাযোগ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ১০ টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। রোববার বিকেলে পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে ভেঙে গেছে এই ব্রীজ।
এলাকাবাসী জানান, অব্যাহত নদী ভাঙনে সেতুটি দেবে যাওয়া শুরু হয় শুক্রবার রাত থেকে। দেবে যাওয়া সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে সেতু দিয়ে মানুষ চলাচল করছিল। কিন্তু রবিবার বিকেলে সেতুটি ভেঙে পড়েছে। এতে সব ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সাথে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এই ব্রীজের দুপাশের কমপক্ষে ৫ শ মিটার পাকা রাস্তা, কমপক্ষে ৫ একর (৫ শ শতাংশ) ফসলী জমি ও ১৫টি বসত বাড়ি। ভাঙনের কবলে রয়েছে আরো অর্ধশত বসত বাড়ি। এদিকে ভাঙন কবলিত ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো অনত্র আশ্রয় নিয়েছেন, কয়েকটি পরিবার রয়েছেন খোলা
আকাশের নিচে।
জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে এলজিইডির অর্থায়নে উপজেলার কোশুন্ডা এলাকায় এই
ব্রীজ নির্মিত হয়। আর ব্রীজের দুপাশে বৈলট এলাকা থেকে জাবরা পর্যন্ত পাকা রাস্তাটি হয় ২০১০ সালে। ধলেশ্বরী নদীর পাশের রাস্তা দিয়ে নির্মিত সেতু ও পাকা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতেন বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের কোশুন্ডা, চড় কোশুন্ডা, পেঁচার কান্দা, শিমুলিয়া, সাইংজুরী,গোবর চাকা, বেনুরা, চড় বেনুরা, সিংজুরী ইউনিয়নের আশাপুর, শিমুলিয়া, ঘিওর ইউনিয়নের ঘিওর পূর্ব পাড়া গ্রামের বাসিন্দরা। ব্রীজ ও সংলগ্ন পাকা সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার মানুষজন বিকল্প রাস্তা দিয়ে কমপক্ষে ৪/৫ কিলোমিটার ঘুরে তাদের বাড়ি যেতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ধলেশ্বরী নদীতে এসব এলাকার রাস্তা ঘাট, বাড়ি ঘর ও জমি ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ কোন কার্য্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। নদীতে অসময়ে পানি বৃদ্ধির ফলে চলতি মাসের শুরুর দিকে ভাঙন তীব্রতর হয়। মাঝে পানি কমে গেলে ভাঙন থামেনি। ব্রীজ ও পাকা রাস্তা নদীর পেটে। এখন আমরা যাতায়াত করবো কিভাবে?
ভাঙনে ফসলী জমি ও ভিটে হারানো আনোয়ারুল হক বলেন, চলতি মাসের ভাঙনে আমার
ফসলী জমি ও বসত ভিটে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে দ্রতকার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়া হলে আরো অনেক মানুষ ভিটে হারা হওয়ার আশংকা রয়েছে।
সাদেক মোল্লা নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আসলে আমাদের কপালটাই খারাপ।
প্রতি বছরই নদী ভাঙে। ভিটেমাটি হারা হয় মানুষ। ফসলী জমি ভেঙে অবস্থা সম্পন্ন মানুষ মূহুর্তেই বসে যায় পথে। সংশ্লিষ্ট কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ রতন মিয়া বলেন, অব্যাহত নদী ভাঙনে গত ৩ বছর যাবত
এই ইউনিয়নের কমপক্ষ্যে ৭০ থেকে ৮০টি বসত বাড়ি ও বির্স্তীর্ন ফসলী জমি নদীতে ভেঙে গেছে। চলতি বছর ভাঙন ধরে রাস্তা ও ব্রীজের গোড়ায়। এ ব্যাপারে আমি ও আমার ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার অবহিত করলেও তারা কার্যত কোন পদক্ষেপ নেয় নি। তিনি আরো বলেন, জনস্বার্থে দ্রুত বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কী না সেটা ভাবছি।
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা আমি কয়েকবার পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত ও মৌখিকভাবে অবহিত করেছি। নদীর গতিপথ সরলীকরণ করলে বসতবাড়ি ও ফসলী জমি রক্ষা করা যাবে। এলাকাবাসীর বিকল্প যোগাযোগব্যবস্থা করতে আমি কাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেবো।
Posted ৮:৩৩ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০১ নভেম্বর ২০২২
Desh24.news | Azad
.
.