আব্দুর রাজ্জাক, (মানিকগঞ্জ ) | বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪ টিতেই পরাজয় বরণ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। বাকি ৩ ইউপিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা পেয়েছে কষ্টার্জিত জয়। অর্ধেকের বেশি ইউপিতে আওয়ামীলীগের পরাজয়ের নেপথ্যে নানা কারন বিশেষন করছেন এলাকার সাধারন মানুষজন থেকে দলীয় উচ্চ পর্যায়ের নেতা কর্মীরা। দলীয় কোন্দল, দাপুটে বিদ্রোহী প্রার্থী, আঞ্চলিকতার প্রভাব ও বিএনপি ঘরানার ভোট তাঁদের পরাজয়ের কারণ বলে মনে করছেন দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ ভোটাররা। তবে এসব কারনের বাইরেও খোদ আওয়ামীলীগের অনেক নেতা কর্মীর রহস্যজনক ভূমিকা ও দলীয় প্রার্থী সিলেকশনে তৃণমূলের প্রত্যাশা উপেক্ষার কারনে এই পরাজয়, এমনটা জানালেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা। আওয়ামীলীগের নির্বাচিত ৩ জন চেয়ারম্যান হলেন, পয়লা ইউনিয়নে ইঞ্জিনিয়ার হারুণ-অর-রশীদ, বড়টিয়া ইউনিয়নে সামসুল আলম মোল্লা রওশন ও নালী ইউনিয়নে আব্দুল কুদ্দুস মধু।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ঘিওর সদর ইউনিয়নে অহিদুল ইসলাম টুটুল ও সিংজুরী ইউনিয়নে আবু মোঃ আসাদুর রহমান মিঠু।
এছাড়াও বিএনপি ঘরোনার বানিয়াজুরি ইউনিয়নে এস আর আনসারি বিল্টু এবং বালিয়াখোড়া ইউনিয়নে মোঃ আওয়াল খান নির্বাচিত হয়েছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিএনপি ঘরোনার ৪ জনই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।
পক্ষান্তরে নৌকার ৩ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন অপেক্ষাকৃত কম ভোটের ব্যবধানে। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়ে পান নি এমন ১০ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নির্বাচনের আগে বহিষ্কার করে জেলা আওয়ামীলীগ। তাদের মধ্যে রেকর্ড পরিমান ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছেন ঘিওর সদর ইউনিয়নে অহিদুল ইসলাম টুটুল ও সিংজুরী ইউনিয়নে আবু মোঃ আসাদুর রহমান মিঠু। সিংজুরী ইউপিতে আসাদুর রহমান পেয়েছেন ৬৭৭৫ ভোট পক্ষান্তরে নৌকার প্রার্থী আব্দুল আজিজ মাষ্টার পেয়েছেন ২৪৬২ ভোট। নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত ঘিওর সদর ইউপির অহিদুল ইসলাম টুটুল পেয়েছেন ৮৮৩৬ ভোট তার বিপরীতে নৌকার প্রার্থী হামিদুর রহমান আলাই পেয়েছেন ৬১৪৯ ভোট। অপরদিকে আঞ্চলিকতার টান আর বিএনপি ঘরানার প্রার্থী বানিয়াজুরি ইউনিয়নে এস আর আনসারি বিল্টু পেয়েছেন ৫৩৬৫ ভোট। ২য় অবস্থানে বিএনপি ঘরানার অপর প্রার্থী আবুল কাশেম চতু পেয়েছেন ৪৮৯২ ভোট এবং এই ইউপিতে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নূর আলম ৩৫৫৫ ভোট পেয়ে হয়েছেন তৃতীয়। বালিয়াখোড়া ইউনিয়নে বিএনপি ঘরানার মোঃ আব্দুল আওয়াল খান পেয়েছেন ৫৯৩৯ ভোট। তিনি পরপর তৃতীয়বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী আব্দুল লতিফ ৫২৭৩ ভোট পেয়ে হয়েছেন দ্বিতীয়। বড়টিয়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ প্রার্থী সামসুল আলম মোল্লা রওশন ৫১৮১ ভোট পেয়ে প্রথম হয়েছেন। পক্ষান্তরে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি ঘরানার ফরিদ হোসেন বাবর ৩২৫৪ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন। পয়লা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মোঃ হারুন আর রশিদ পেয়েছেন ৬১৩৪ ভোট। পক্ষান্তরে বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ শফিকুল ইসলাম মৃধা পেয়েছেন ৩৫৯২ ভোট। নালী ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মোঃ আব্দুল কুদ্দুস মধূ পেয়েছেন ৬২০৭ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ দিলশাদ খান ২৯৬৬ ভোট।
উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক গৌরাঙ্গ কুমার ঘোষ বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। জনগন যাকে চেয়েছে, সেই নির্বাচিত হয়েছেন। তবে কয়েকটি ইউনিয়নের নেতা কর্মীদের মাঝে বিবাদমান দলীয় কোন্দল এবং কয়েকজন প্রার্থী ভোটারদের মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছে। যার কারনেই এই পরাজয়।
বালিয়াখোড়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের পরাজিত প্রার্থী আব্দুল লতিফ মুঠোফোনে বলেন, দলীয় মনোয়েনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছি। জয় পরাজয় থাকবেই। তবে সব কথা মোবাইলে বলা যায় না। সামনা সামনি একসময় কথা বলবো। সিংজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান (আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ও বহিষ্কৃৃত) আবু মোঃ আসাদুর রহমান মিঠু বলেন, দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। পাইনি। কিন্তু বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছি। নির্বাচনে অংশ নিতেও চাইনি। এলাকার হাজারো মানুষ অনেকটা জোর করে নির্বাচন করিয়েছেন।
ঘিওর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, দলীয় কোন্দল ঠিক তেমন নেই। বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন করার কারনে সাধারন ভোটারদের মাঝে প্রভাব পরেছে। এছাড়াও বিএনপি ঘরানার ভোট স্বতন্দ্র প্রার্থীরা পেয়েছেন। এই জন্য এখানে নৌকার প্রার্থীরা জয় কম পেয়েছে।
Posted ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
Desh24.news | Azad
.
.