ডেস্ক রিপোর্ট | শুক্রবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
সাইমন হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : আজ ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও পাক হানাদার মুক্ত দিবস। একাত্তরের এই দিনে ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী জনগণের দুর্বার প্রতিরোধে পিছু হাটে পাকিস্তান সৈন্যরা ফলে আজকের এই দিনে ঠাকুরগাঁও পাকিস্তানিদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে সারাদেশের মতো ঠাকুরগাঁয়েও পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করে। নিরস্ত্র বাঙালির ওপর চালায় নির্যাতন। গ্রামে গ্রামে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটে মেতে ওঠে। একইসঙ্গে চলতে থাকে অমানুষিক অগ্নিসংযোগ এরপর ১৫ এপ্রিল আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর দখলে চলে যায় ঠাকুরগাঁও।
এরই মধ্যে সংগঠিত হতে থাকে ঠাকুরগাঁওয়ের মুক্তিকামী মানুষ। তারা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে গড়ে তুলে দুর্বার প্রতিরোধ ওসময় ঠাকুরগাঁও ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। কমান্ডার ছিলেন বিমান বাহিনীর স্কোয়াড্রন লিডার এম. খাদেমুল বাশার। এ সেক্টরে প্রায় ১০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ছিল। ২৯ নভেম্বর এ মহকুমার পঞ্চগড় থানা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। পঞ্চগড় হাতছাড়া হওয়ার পর পাকবাহিনীর মনোবল ভেঙে যায়। এরপর তারা শক্তি বৃদ্ধি করে সদলবলে প্রবেশ করে ঠাকুরগাঁয়ে।
২ ডিসেম্বর রাতে ঠাকুরগাঁয়ে প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনপণ লড়াইয়ে সে রাতেই শত্রুবাহিনী ঠাকুরগাঁও থেকে পিছু হটে ২৫ মাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয় ফলে ৩ ডিসেম্বর ভোরে ঠাকুরগাঁও শহর শত্রুমুক্ত হয়।
ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের ডেপুটি কমান্ড আব্দুল মান্নান বলেন, ঠাকুরগাঁও তখন ছিল মহকুমা। বর্তমান ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার ১০টি থানা ছিল এ মহকুমার অন্তর্গত। ৩ ডিসেম্বর সকাল থেকেই ঠাকুরগাঁও শহরে মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বের হয় আনন্দ মিছিল। জয়ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ অঞ্চলের জনপদ। হাজার হাজার মানুষ উদ্বেলিত কণ্ঠে “জয়বাংলা” জয় বাংলা ” বলতে বলতে মুক্ত শহরের রাস্তায় বের হয়ে আসে। এ সময় অনেকের হাতে ছিল প্রিয় স্বদেশের পতাকা।
মুক্তিযোদ্ধা প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল মজিদ জানান, ১৯৭১ সালে ২৩ এপ্রিল ১৮নং শুকানপুর ইউনিয়নে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার লোককে পাকিস্তানি সৈন্যরা নিরিহভাবে হত্যা করে তাই আমাদের এ শুকানপুকুরীকে বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার দাবি জানাচ্ছি।
জেলার শহর থেকে পল্লী অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতি বিজড়িত গণকবর আর বধ্যভূমি।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদ্দুরুদোজা বদর বলেন, দেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে যারা এতোটুকু কুণ্ঠিত হয়নি, আজ সেই সব শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ পায়নি তাদের যথাযথ মর্যাদা।
তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সরকারই শহীদদের স্মৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান দেখিয়ে গণকবর ও বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেয়নি তবে দুই একটি জায়গায় স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও সেগুলো অযত্নের মধ্যে অরক্ষিত অবস্থায় আছে।
Posted ৩:১৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২১
Desh24.news | Azad
.