নিজস্ব প্রতিবেদক | মঙ্গলবার, ০৯ মার্চ ২০২১ | প্রিন্ট
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া মো. ফারহাদ হোসেন রুবেল (২৮) নামে এক হাজতিকে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরের দিকে নরসিংদী জেলার রায়পুর উপজেলার বাল্লাকান্দি চর এলাকা থেকে কোতোয়ালী থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন।
ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন জানান, রুবেলকে নরসিংদী জেলার রায়পুর থানার বাল্লাকান্দি চর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার দিনভর তদন্ত কমিটি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের মাধ্যমে কারাগারের অভ্যন্তরে তল্লাশি চালানো হয়েছে।
সূত্র জানা যায়, হাজতি রুবেল ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের ৫ তলার ১৫ নম্বর কক্ষ থেকে বের হন। সেখান থেকে বের হয়ে বাইরের পানির ট্যাংক থেকে হাত মুখ ধুয়ে নেন। এরপর ওই ভবন থেকে নিচে নেমে সাঙ্গু ভবনের পাশে অবস্থিত ফাঁসির মঞ্চের দিকে চলে যান। এরপর থেকে তার আর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে না সিসি ক্যামেরায়। তাই তদন্ত কমিটির ধারণা, ফাঁসির মঞ্চের পাশ দিয়ে কারাগারের উঁচু দেয়াল টপকেই হাজতি রুবেল পালিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে সোমবার তদন্ত কমিটির প্রধান খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি প্রিজন্স মো. ছগির মিয়া বলেন, রুবেল পালিয়েছে সেটা শতভাগ সত্য। কোন পথে পালাতে পারে, তা নিশ্চিত হতে সম্ভাব্য সবকিছুই যাচাই করা হয়েছে। ঘটনার দিনের সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছি। কোনো কোনো ফুটেজে তার উপস্থিতি মিললেও আবার কোনো কোনো ফুটেজে তার উপস্থিতি নেই। তবে একটি ফুটেজে তাকে ফাঁসির মঞ্চের পাশের দেয়ালের দিকে যেতে দেখা গেছে। আবার ওদিকে একটি বিড়ালেরও উপস্থিতিও দেখেছি। তাই শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারছি না, ওদিকেই সে পালিয়েছে। এরপরও আমাদের ধারণা, দেয়াল টপকেই হাজতি রুবেল পালিয়ে যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, শনিবার (৬ মার্চ) সকালে কারাগার থেকে নিখোঁজ হওয়া হাজতি রুবেলের হদিস পাওয়া যায়নি বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ। কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে রুবেল কী পালিয়ে গেল, নাকি তাকে ঘিরে কারা অভ্যন্তরে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেছে, তা নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারেননি। উদ্ভূত এমন পরিস্থিতির মধ্যে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
এদিকে কারাগার থেকে হাজতি রুবেল নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগে জেলার মো. রফিকুল ইসলামসহ এক ডেপুটি জেলারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া কর্ণফুলী ভবনের ১৫ নম্বর সেলের দায়িত্বরত কারারক্ষী নাজিম উদ্দিন ও সহকারী কারারক্ষী ইউনুস মিয়া সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। সহকারী প্রধান কারারক্ষী কামাল হায়দারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
কারা সূত্র জানা যায়, নিখোঁজের দুইদিন আগে ৪ মার্চ অন্য বন্দির সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয় রুবেল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রুবেলকে শাস্তি হিসাবে কর্ণফুলী ভবনের ১৫ নম্বর ‘পানিশমেন্ট ওয়ার্ড’ এ ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছিল।
এদিকে শনিবার (৬ মার্চ) ভোর থেকে হাজতি রুবেলের সন্ধান না মেলায় দিনভর তল্লাশি করে সন্ধ্যায় জিডির পর রাতে মামলা করেন প্রত্যাহার হওয়া জেলার রফিকুল ইসলাম। কোতোয়ালী থানার মামলা নম্বর ২৩/২১। ধারা-দণ্ডবিধির ২২৪।
মামলার এজহারে তিনি উল্লেখ করেন, শনিবার (৬ মার্চ) ভোর ৬টা থেকে তালামুক্ত করার পর ফরহাদ হোসেন ওরফে রুবেল নামে এক হাজতিকে পাওয়া যাচ্ছে না। যার হাজতি নম্বর ২৫৪৭/২১। তিনি গত ৯ ফেব্রুয়ারি সদরঘাট থানার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আসেন। তার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানায়। আগের দিন শুক্রবার রাতে সবার সাথে রুবেলও কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের ৫ম তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে থাকলেও ভোর সাড়ে ৬টার পর থেকে তার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। পরে দায়িত্বরত কারারক্ষী ও হাজতিদের কাছ থেকে জানতে পারেন, হাজতি রুবেল শনিবার ভোর ৫টা ১৫ মিনিটে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যান। পরবর্তীতে পুরো কারাগারে তল্লাশি করেও তার হদিস মেলেনি।
এর আগে শনিবার দিনভর কারা অভ্যন্তরে তল্লাশি করেও হদিস না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে কারা কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. শফিকুল ইসলাম খান কোতোয়ালী থানায় জিডি করেন। জিডি নম্বর-৪১৭।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের অর্ন্তবর্তীকালীন হাজতের পরোয়ানা মোতাবেক গত ৯ ফেব্রুয়ারি রুবেলকে কারাগারে পাঠানো হয়। শনিবার সকাল ৬টা থেকে কারা অভ্যন্তরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তার সন্ধানে কারা অভ্যন্তরে তল্লাশি চলছে।
জানা যায়, এর আগে ২০১৮ সালে নরসিংদীর রায়পুরার ফরহাদ হোসেন রুবেল কারাগারে গেলে সেই সময় দুইবার কারাগারের ড্রেনে ও ছাদে আত্মগোপন করেন। সেই সময় ব্যাপক খোঁজাখুঁজির পর দুইবারই তাকে উদ্ধার করে কারা কর্তৃপক্ষ। এবারও তিনি সেই কাজ করেছেন ধারণা করে কারা কর্মকর্তারা আশা করেন রাতের মধ্যেই কারাগারের ভেতর থেকে তার সন্ধান মিলবে।
রুবেল সদরঘাট থানার এসআরবি রেল গেইট এলাকায় ৫ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে তুচ্ছ ঘটনায় আবুল কালাম আবু নামের এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে বুকে ছুরিকাঘাত করেন। পরদিন সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কালাম হাসপাতালে মারা যান। ৬ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে হত্যার অভিযোগে ডবলমুরিং থানার মিস্ত্রি পাড়া থেকে ফরহাদ হোসেন রুবেলকে গ্রেপ্তার করে সদরঘাট থানা পুলিশ। ওই মামলায় ৯ ফেব্রুয়ারি আদালতের মাধ্যমে কারাগারে যান রুবেল।
Posted ৩:৪৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ মার্চ ২০২১
Desh24.news | Azad
.
.