মঙ্গলবার ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঈশ্বরদীতে ব্যবসায়ী শাকিল হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন

মোঃ খায়রুল বাশার মিঠু,ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি   |   বুধবার, ০২ জুন ২০২১ | প্রিন্ট  

ঈশ্বরদীতে ব্যবসায়ী শাকিল হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটন

ঈশ্বরদী বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী শাকিল হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটিত হয়েছে এবং ঘটনার সহিত জড়িত সন্দেহে আটক ২ জনই হত্যাকারী বলে জানায় পুলিশ।

বুধবার (২ জুন) পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই হত্যাকান্ডের বিবরণ সংবাদ মাধ্যমকে অবহিত করেন।


সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, ঈশ্বরদী থানা পুলিশের নিকট সংবাদ আসে যে, ঈশ্বরদী শহরের রূপনগর (কলেজপাড়া) মহল্লায় জনৈক আহসান হাবীব এর বাড়ীর ২য় তলার ভাড়াটিয়া শাকিল আহমেদ (৩৫) খুন হয়েছে।

গত ২৮ মে রাত্রী অনুমান ১০টা ৩০ মিনিটের সময় পুলিশ উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পায় যে, শাকিলের মরদেহ তার শয়ন কক্ষের বিছানার উপরে চিৎ অবস্থায় পরে আছে এবং তাহার স্ত্রী মিম খাতুন (২০) শাকিলের মৃতদেহের পার্শ্বে বসে আছে।

নিহত শাকিল আহমেদ (৩৫) ঈশ্বরদী থানার মুলাডুলি ইউনিয়নের দুবলাচারা (পতিরাজপুর) গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন প্রামাণিকের ছেলে। সে ঈশ্বরদী বাজারে কাপড়ের ব্যবসায়ী।

মৃতের স্ত্রী মিম জানান, শুক্রবার ২৮ মে রাত অনুমান ৮ টার সময় ২ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি শাকিলের ভাড়া বাসায় এসে শাকিলকে ডাকাডাকি করলে শাকিলের স্ত্রী মিম ঘরের দরজা খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞাতনামারা জোরপূর্বক ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে মিমকে ২টি থাপ্পর মারে এবং বুকের নিচে একটি লাথি মারিলে মিম অজ্ঞান হয়ে যায়।

পরে শাকিলের স্ত্রী রাত অনুমান ৯টার সময় জ্ঞান ফিরে দেখতে পায় তার হাত, পা ও মুখ কাপড় দ্বারা বাঁধা এবং ঘরের দরজা বাহির থেকে আটকানো। মিম তার হাত-পা বাঁধা অবস্থায় প্রতিবেশিদের সাহায্য পাবার আশায় প্রায় একঘন্টা যাবত দুই পা দিয়ে ঘরের দরজা ও ওয়ারড্রপে লাথি মেরে শব্দ করতে থাকে।

রাত অনুমান ১০টার সময় উক্ত বাড়ীর মালিকের স্ত্রী নাজমা বেগম ২য় তলায় শব্দ শুনে শাকিলের দরজার নিকট গিয়ে দেখতে পান বাহির থেকে ছিটকিনি লাগানো। নাজমা বেগম শাকিলের ঘরের দরজার ছিটকিনি খুলে দরজার পার্শ্বে শাকিলের স্ত্রী মিম হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন।

তখন নাজমা বেগম মিমের হাত পায়ের বাঁধন খুলে দেন এবং চিৎকার করে প্রতিবেশিদের ডাকেন। শাকিলের শয়ন কক্ষে যেয়ে বিছানার উপর শাকিলের মৃতদেহ চিৎ অবস্থায় পরে থাকতে দেখেন।

শাকিলের মৃতদেহের ডান কাঁধের উপরে সামান্য ছেলা জখম ব্যতীত অন্যকোন জখম দেখা যায় নাই। এই ঘটনার বিষয়ে মৃত শাকিলের মামা কোরবান আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শাকিলকে হত্যার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ সুপার, পাবনা মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খানের দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোঃ মাসুদ আলম ও ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ফিরোজ করিরের নেতৃত্বে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ হাদিউল ইসলাম সহ পুলিশের একটি চৌকষ দল কাজ শুরু করলে বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঘটনাটি উদঘাটনসহ ২ জন আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

 

তদন্তকালে জানা যায় যে, মৃত শাকিলের স্ত্রী মিম এর সহিত শাকিলের ছোট ভাই সাব্বির এর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক আছে। এছাড়া শাকিলের সহিত শাকিলের পিতা-মাতা ও ভাইয়ের জমিজমা ও পুকুরে মাছ চাষের ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধ তৈরী হওয়ায় শাকিল একই বাড়ীতে অবস্থান করে আলাদা ভাবে সংসার শুরু করেন।

 

শাকিল তার স্ত্রী মিম ও সাব্বির এর পরকীয়ার বিষয়টি আঁচ করিলে শাকিল তার স্ত্রী মিমকে দেবর সাব্বির এর সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন। কিন্তু সাব্বির গোপনে একটি মোবাইল ফোন মিমকে দেয়। সেই ফোন দিয়ে মিম লুকিয়ে সাব্বির এর সাথে গোপনে কথা বলিতো এবং প্রায় সময় তারা বাড়ী ফাঁকা পেলে ঘনিষ্ট ভাবে মিশতো।

 

সাম্পতিক সময়ে আরো কিছু বিবাদকে কেন্দ্র করে শাকিল গত ১৯ মে স্ত্রীকে নিয়ে শহরের রূপনগর কলেজপাড়ার আহসান হাবীবের বাড়ীর ২য় তলায় ভাড়াটিয়া হিসাবে উঠেন।

 

এতে মিম এবং সাব্বির একে অপরের থেকে কিছুটা দূরে চলে যাওয়ায় তারা উভয়ই শাকিলের প্রতি মনেমনে ক্ষিপ্ত হয় এবং শাকিলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। উক্ত পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শাকিলের স্ত্রী মিম বৃহস্পতিবার ২৭ মে তারিখ রাত অনুমান ১০টার সময় পানির সঙ্গে তিনটি ঘুমের ট্যাবলেট গুড়া করে মিশিয়ে শাকিলকে খাওয়ায়। ফলে ২৮ মে তারিখে শাকিল সারাদিন ঘরের মধ্যে শুধু ঘুমাইতে থাকে।

 

সাব্বির শুক্রবার ২৮ মে সন্ধ্যার পর শাকিলের ভাড়া বাসায় যাবে মর্মে পূর্বেই মিমকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে ছিল।

 

ঐদিন সন্ধ্যার পরে সাব্বির গোপনে শাকিলের বাসায় যায়। তখনো শাকিল ঘুমের ঔষধের প্রভাবে খাটের উপর শুয়ে ঘুমাচ্ছিল। সাব্বির এবং মিম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শোফাসেট এর কুশন বালিশ নিয়ে শাকিলের শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে শাকিলকে ঘুমন্ত অবস্থায় নাকে-মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

শাকিলকে অতিরিক্ত ঘুমের ঔষধ খাওয়ানোর ফলে শাকিল তেমন কোন প্রতিরোধ করতে পারেনি। আসামী মিম ও সাব্বির ভিকটিম শাকিলকে হত্যা করে বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী সাব্বির ওড়না দিয়ে মিম এর দুই পা, শাকিলের পাঞ্চাবী দিয়ে মিম এর দুই হাত এবং মিমের পরিহিত ওড়না দিয়ে মিম এর মুখ বেঁধে বাহির দরজার নিকট রেখে ঘরের দরজাটি বাহির থেকে ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।

এ সময় সাব্বির মিমের সঙ্গে গোপনে কথা বলার জন্য তাকে দেয়া মোবাইল ফোনটি নিয়ে যায় এবং বাসার মেইন গেইটের চাবি বাসা থেকে নিয়ে গিয়ে মেইন গেইট খুলে বের হয়ে যাওয়ার সময় চাবিটি একবাসা পরে প্রাচীরের দেওয়ালের উপর রেখে দেয়। এই সংক্রান্তে আসামী মিম ও সাব্বিরকে গ্রেফতার করা হয়।

সাব্বির এর নিকট থেকে মিম এর কথা বলার উক্ত গোপন মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। মিম এর দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে রের্কড করা হয়েছে।

এই ঘটনার সাথে আরো কোন আসামী জড়িত আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আসামী সাব্বিরকে ৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে জানায় পুলিশ।

 

Facebook Comments Box

Posted ৯:৫৭ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ জুন ২০২১

Desh24.news |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
এম আজাদ হোসেন সম্পাদক ও প্রকাশক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

শ্রীসদাস লেন,বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০/ ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

হেল্প লাইনঃ +৮৮০১৯১১৪৭৭১৪১/০১৯১১২২৭৯০৭

E-mail: infodesh24@gmail.com