বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আজ মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

সুরেশ চন্দ্র রায, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি।   |   বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | প্রিন্ট  

আজ মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস

 

স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরের মত এবারও পালিত হলো মানিকগঞ্জ পাক হানাদার মুক্ত দিবস।


বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাত ১২টা ১ মিনিটে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে দিবসটির শুভ সূচনা করেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার।

এসময় মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার গোলাম আজাদ খান, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা এড. গোলাম মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম সুলতানুল আজম খান আপেল, সাংগঠনিক সম্পাদক তায়েবুর রহমান টিপু, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট অসীম কুমার বিশ্বাস, বিজয় মেলার আহ্বায়ক বীরমুক্তিযোদ্ধা মোমিন উদ্দিন খান, সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বিভিন্ন ইউনিটের মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ পুলিশ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ২৫ মার্চ মুক্তি বাহিনীর পক্ষ থেকে আরিচা ফেরিঘাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে হেলিকপ্টারে করে বিপুলসংখ্যক পাকিস্থানি সেনা মানিকগঞ্জ শহরে ঢুকে পড়ে। ভারত থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতিরোধ শুরু করেন। তখন পাকিস্থানি বাহিনী, আল-বদর, আল-শামস ও রাজাকারদের মোকাবেলায় মুক্তিযোদ্ধারা ২টি ব্যানারে কাজ করেন।

সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের সব কাজই অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্বে চলমান থাকে।

১৭ জুলাই ঘিওর থানা আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্থানি সেনাদের আহত করে বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রগহ করেন।
১৮ আগস্ট পাকবাহিনী হরিরামপুর থানায় প্রবেশ করলে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে তারা সেখানে টিকতে পারেনি।

১৩ অক্টোবর সিও অফিসে সংরক্ষিত হানাদার বাহিনী ক্যাম্প দখলের জন্য মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করলে পাকিস্থানি বাহিনী পরাজিত হয়। এখানে হানাদার বাহিনীর ৭০টি রাইফেল, ৩টি এলএমজি ও ৭ বাক্সগুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আসে। ক্যাম্প দখলের পর সেখানকার ওয়্যারলেস অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার সময় আগুনে পুড়ে শহীদ হন মুক্তিয়োদ্ধা মাহফুজুর রহমান।

১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী গ্রামে হানাদার বাহিনী হামলা চালিয়ে তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমান এবং শিক্ষানুরাগী জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরীসহ ৪৩ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। মানিকগঞ্জে ৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এ সময় স্বাধীনতাকামী কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় । এ জেলার ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা বীর প্রতীকের খেতাব পান। খেতাবপ্রাপ্তরা হলেন- স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) বদরুল আলম (বীর প্রতীক), ইব্রাহীম খান (বীর প্রতীক), শহীদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতীক) ও মোহাম্মদ আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক)।

মুক্তিযোদ্ধারা আরও জানান, ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের ৩ দিন পূর্বে মানিকগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধারা মানিকগঞ্জের মাটি থেকে পাক-হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করেন। পরের দিন ১৪ ডিসেম্বর সকালে দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মাজহারুল হক চাঁন মিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতেই ঢাকার ক্র্যাক ডাউনের খবর পুলিশ ওয়ারলেসের মাধ্যমে মানিকগঞ্জের নেতারা জানতে পেরে ওই রাতেই ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে বিপ্লবী পরিষদ গঠন করা হয়। বিপ্লবী পরিষদের অন্যতম সদস্য ছিলেন অ্যাডভোকেট মাজহারুল ইসলাম চান মিয়া, মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া, সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরী, মফিজুল ইসলাম খান কামাল প্রমুখ। বিপ্লবী পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভোররাতে মানিকগঞ্জ ট্রেজারিতে রক্ষিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ বের করে ছাত্র ও জনতার মাঝে বিতরণ করা হয়। পরের দিন থেকে ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর আলুর গুদামের পেছনে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং।

আগস্ট মাসের দিকে মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা সংঘটিত হয়ে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নেয়। এসময় পাকিস্থান সরকার মেট্রিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছিল। পরিক্ষা বানচাল করার উদ্দেশ্যে ক্যাপ্টেন আবদুল হালীম চৌধুরীর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধারা ঘিওর সদরে আক্রমণ করেন। এ আক্রমণের ফলে ঘিওরে মেট্রিক পরীক্ষা বানচাল হয়ে যায়। এটাই ছিল মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম অপারেশন।

এরপর থেকে মানিকগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা অনেক যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেন। এরমধ্যে গোলাইডাঙা, গাজিন্দা, আজিমনগর, সূতালড়ি, বালিরটেক, বায়রা, নিরালী, মানরার যুদ্ধ অন্যতম। গোলাই ডাঙ্গার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ৮১ জন পাক হানাদার বাহিনী নিহত হয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে জেলা থেকে ১৩ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনীরা চলে গেলে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে মানিকগঞ্জে ১৫ দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়।

Facebook Comments Box

Posted ১২:১৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩

Desh24.news |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
এম আজাদ হোসেন সম্পাদক ও প্রকাশক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

শ্রীসদাস লেন,বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০/ ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

হেল্প লাইনঃ +৮৮০১৯১১৪৭৭১৪১/০১৯১১২২৭৯০৭

E-mail: infodesh24@gmail.com