শনিবার ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোহনপুর প্রধান শিক্ষকের কারণে দশম শ্রেণীর ক্লাস বঞ্চিত ৬ শিক্ষার্থী

রাজশাহী প্রতিনিধি   |   রবিবার, ১৯ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট  

মোহনপুর প্রধান শিক্ষকের কারণে দশম শ্রেণীর ক্লাস বঞ্চিত ৬ শিক্ষার্থী

 

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার স্বনামধন্য মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা ও অব্যস্থাপনার কারণে দিন দিন স্কুলের সুনাম ক্ষুন্ন হতে বসেছে। প্রধান শিক্ষকের দুরদর্শিতার অভাবে প্রায়শই কোন না কোন ঘটনার জন্ম স্কুলটিকে ফেলেছে বিশাল সমালোচনার মুখে। ‘প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় পরিচালনার নিয়মকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে তার মনগড়া সিদ্ধান্তের কারণে প্রায় ৩ মাস ধরে দশম শ্রেণীতে ক্লাশ করতে পারছেন না ৬ শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষকের আচরণ ও অমানবিক সিদ্ধান্তের কারণে টিসি নিতে বাধ্য হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।


 

শিক্ষার্থী পেটানো, প্রাইভেট না পড়লে ফেল করানো, বেশীর ভাগ সময় ক্লাশ না হওয়া,  সময়মত প্রধান শিক্ষক স্কুলে না আসা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সাথে দূর্ব্যবহার, শিক্ষার্থী অসন্তোষ,অভিভাবক সমাবেশ না করাসহ নানা অনিয়মে নিমজ্জিত এই উচ্চ বিদ্যালয়টি।

 

শিক্ষার্থী আল মারুফের অভিভাবকের মাধ্যমে জানা যায়, চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র দিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণের জন্য লিখিত আবেদন করে দিনের পর দিন প্রধান শিক্ষকের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও তিনি দশম শ্রেণিতে তুলে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের গাছের শেকড়ের সাথে তুলনা করে বলেন “শেকড় পঁচে গেছে, মূল ও পঁচে যাবে” বলে মন্তব্য করে অপমান অপদস্ত করে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন। তার অমানবিক সিদ্ধান্তের কারণে বাধ্য হয়ে নবম শ্রেণীতে ক্লাশ করছেন ৪ শিক্ষার্থী।

 

অসুস্থ হয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার পরেও ৬ শিক্ষার্থীকে ফেল দেখিয়ে নবম শ্রেনী হতে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করেননি প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিন।

 

অথচ কিছু প্রভাবশালী অভিভাবকের সাথে তার সম্পর্ক ভাল হওয়ায় এবং সেই শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা না দিলেও অনেক শিক্ষার্থীকে পাশ দেখিয়ে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহীন। এমন কথা তিনি অভিভাবকের সামনে নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন শিক্ষক বলেন, করোনা কালীন সময়ে সরকার নির্ধারিত ক্লাশ রুটিন অনুযায়ী ক্লাস পরিচালনার সময় তিনি শিক্ষার্থীদের দয়া অনুগ্রহ করে ক্লাশ করাচ্ছেন বলে মন্তব্য করায় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে বলেন তোরা এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না।

প্রধান শিক্ষকের মুখে এমন কথা শুনে শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

যা পরবর্তীতে মানববন্ধন পর্যায়ে গড়ায়। পরবর্তীতে দুই শিক্ষকের অনুরোধে এ্যাসেম্বলী রুমে ৬০০ শিক্ষার্থীর সামনে ৬ বার ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পান প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিন। অহংকারী, বদ মেজাজি ও বিতর্কিত প্রধান শিক্ষকের কারণে মোহনপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ দিন দিন তলানী ঠেকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মাঝে দিন দিন ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে স্কুলকে বড় কোন ঘটনায় ফেলতে পারে বলে মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।

 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সাথে তার সম্পর্ক দা কুড়ালের মত। কিছু কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বয়সের ভারে তিনি মাঝে মধ্য ভুলভাল বকেন এবং তার ব্যবহার পাগলের মত হয়ে গেছে।

 

প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিন এর অমানবিক স্বীদ্ধান্তের বলি  শিক্ষার্থীরা হলেন, “ক সেকশনে” জিৎ, “খ সেকশনে” আল মারুফ সূবর্ণ, মাসুম পাভেল হৃদয়, আয়েশা সিদ্দিকা, জাকির হোসেন, সুমাইয়া আকতার নদি। জিৎ ও মারুফ বাদে বাকিরা  ভয়ে বাধ্য হয়ে নবম শ্রেণিতে পুন:রায় ক্লাস করছেন বলে জানা গেছে। তাদের দ্রুত দশম শ্রেণিতে উত্তলোন না করা হলে ক্লাশ রুটিন অনুযায়ী পিছিয়ে পড়বে বলে দাবি অভিভাবকদের।

 

এবিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আল-মারুফ সূবর্ণের বাবা সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী শাহিন সাগর বলেন, অসুস্থতার কাগজপত্র দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে আবেদন করে কোন সাড়া না পেয়ে প্রথমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অঞ্চল উপ-পরিচালক ড. শরমিন ফেরদৌস এর দপ্তরে লিখিত আবেদন করি। এরপর তিনি প্রধান শিক্ষক সুলতানা শাহিনকে শিক্ষার্থী মারুফকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করে দিতে নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ পেয়ে প্রধান শিক্ষক বিষয়টি চেপে গিয়ে তার মনগড়া সিদ্ধান্ত বজায় রাখেন। তিনি আরো বলেন, মানবতার মহান সেবায় নিয়োজিত একজন প্রধান শিক্ষক শিক্ষার্থীকে গাছের শেড়র বাকড়ের সাথে তুলনা করে চরম অন্যায় করছেন। এই বদ মেজাজি ও অহংকারী প্রধান শিক্ষকের বিচার দাবি করছি।

 

এবিষয়ে পুলিশ সদস্যের ছেলে শিক্ষার্থী জিৎ এর মা জানান, আমার ছেলেকে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্নের জন্য প্রধান শিক্ষকে গত ২ মাস ধরে অনুরোধ করলেও তিনি বিভিন্ন ভাবে আমাকে অপমান করেছেন এবং ভবিষ্যতে যেন স্কুলে আপনার পা না পড়ে বলে ভয়ভীতি ও রক্তচক্ষু দেখিয়ে স্কুল হতে বের করে দিয়েছেন। আমি আমার ছেলের ভবিষ্যত কথা চিন্তা করে ওই বেহায়া প্রধান শিক্ষকের কাছ টিসি নিয়ে ছেলেকে অন্য স্কুলে ভর্তি করেছি।

Facebook Comments Box

Posted ৭:২৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ মার্চ ২০২৩

Desh24.news |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
এম আজাদ হোসেন সম্পাদক ও প্রকাশক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

শ্রীসদাস লেন,বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০/ ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

হেল্প লাইনঃ +৮৮০১৯১১৪৭৭১৪১/০১৯১১২২৭৯০৭

E-mail: infodesh24@gmail.com