আব্দুর রাজ্জাক, (মানিকগঞ্জ ) | রবিবার, ১৯ মার্চ ২০২৩ | প্রিন্ট
মানিকগঞ্জের ঘিওরে দুই বছরেও চালু হয়নি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) নির্মিত সোলার প্যানেল সিস্টেম কৃষি সেচ পাম্প। এতে কৃষি এবং কৃষকদের উন্নয়নে কোনো কাজে আসছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কর্মকর্তাদের উদাসিনতায় সরকারী প্রকল্পের সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শতাধিক কৃষক।
জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে বৃহত্তর ঢাকা জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের ধান এবং রবিশস্য আবাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) উপজেলার ঘিওর সদর ইউনিয়নের নদীর উত্তরপাড় চর ঘিওর এলাকায় একটি ‘সোলার প্যানেল সেচ পাম্প’ স্থাপন করে। প্রকল্পটিতে ব্যয় হয় ২০ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬শত ৯৭ টাকা।
এ সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ ছাড়াই কৃষকদের সেচ সুবিধা পাওয়ার কথা। স্থানীয় কৃষকদের সমন্বয়ে সমিতির মাধ্যমে পাম্প পরিচালনার জন্য স্কিম ম্যানেজার ও কেয়ারটেকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ পাম্পটি চালু হলে ওই এলাকার অন্তত ৭০ বিঘা জমিতে সেচ সুবিধা পাবে। এতে শতাধিক কৃষক প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবেন। কিন্তু ২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো চালু হয়নি কৃষকদের জন্য স্থাপন করা সেচ পাম্পটি। ফলে কাজে আসছে না ওই এলাকার কৃষকদের উন্নয়নে এ প্রকল্প।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে ওই প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকদের ক্ষেতের আইলে বিএডিসি লোগো সম্বলিত একটি করে প্লাস্টিকের পাইপ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। যা থেকে কৃষকরা কোন সেচ সুবিধা পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে কৃষকেরা বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত স্যালো মেশিন দিয়ে বোরো চাষ করছেন।
কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, কৃষকদের খুব কম মূল্যে সেচ সুবিধা দেয়া হবে এমন প্রলোভন দেখিয়ে বিএডিসির লোকজন তাদের ইচ্ছা মতো সেচ পাইপ স্থাপন করে গেছে। এগত দুই মৌসুমে তাদের কোন দেখা পাওয়া যায়নি। কৃষকদের উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখেছেন বিএডিসি।
কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, আমি বিদ্যুত চালিক মোটর বসিয়ে ব্যক্তিগত তিন বিঘা এবং অন্যান্যদের আরও ১৭ বিঘা জমিতে বোরো ধানে পানি দিচ্ছি। বর্তমানে তেল এবং বিদ্যুতের দাম বারতি। বিএডিসি’র সোলার সেচ না পেয়ে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ দিয়ে সেচ চালাচ্ছি।
স্থানীয় কৃষক জহির মিয়া, দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতি বিঘায় এক হাজার টাকা হারে সেচ খরচ নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু চালু না হওয়ায়, বাড়তি খরচে বিদ্যুৎ চালিত সেচ দিয়ে ইরিবোরো আবাদ করেছেন। সোলার পাম্পটি চালু থাকলে এক ফসলি জমিতে দুই ফসল এবং দুই ফসলি জমিকে তিন ফসল করাসহ ব্যাপকভাবে রবিশস্য আবাদ করা সম্ভব।
সৌর পাম্প দেখভালের দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার দুলাল শিকদার বলেন, দুই বছর যাবত এই প্রকল্পের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন বেতন পাইনি। পাম্পটি চালু না হওয়ায় কৃষকরা আমাদের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলছে।
পাম্প পরিচালনার জন্য দায়িত্বে থাকা স্কিম ম্যানেজার ও সমিতির কোষাধক্ষ্য রুহুল খান বলেন, পাম্পটি চালু করার জন্য কৃষকদের সাথে কয়েকবার মিটিং করেছি। পাম্পটি পরিচালনার জন্য একজন শ্রমিকও রেখেছি। এটা আমাদের গাফিলতি না, বিএডিসি কর্মকর্তাদের গাফলতি ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে তিন দফা চেষ্টা করেও পাম্প চালু করা সম্ভব হয়নি।
জেলা বিএডিসি (সেচ বিভাগের) সহকারী প্রকৌশলী তিতাস জানান, ৩ মাস ধরে পাম্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পাম্প চালানোর জন্য তাগিদ দিয়েছি। মূলত এখানে কৃষকদের কোন্দলের কারনে পাম্পটি মৌসুমের শুরুতে চালু করা যায়নি। এখন কোন্দল মিটে গেছে, কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে চালু হচ্ছে না। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে মেকানিক এসে পাম্পটি চালু করার কথা রয়েছে। আমাদের চেষ্টা অব্যহত আছে।
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, সোলার সেচ পাম্প প্রকল্পটি কেনো চালু হচ্ছে না এ বিষয়ে সংশিষ্টদের সাথে আলাপ করে পাম্পটি চালু করার ব্যবস্থা করা হবে।
Posted ৬:৫৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৯ মার্চ ২০২৩
Desh24.news | Azad
.