আব্দুর রাজ্জাক মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি | বুধবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ | প্রিন্ট
মনের আশা পূরণের প্রত্যাশায় তিনশ বছরের সম্প্রীতির উৎসব এখনো জমজমাট।
কারও হাতে খেলনা, কারও হাতে মুখরোচক নানা খবার। আগন্তুকরা নতুন ও পরিপাটি
কাপড় পরিহিত। গ্রামজুড়ে সাজ সাজ রব। সবার মধ্যে উৎসবের আমেজ। অনেকেই
ছুটছেন মনের আশা পূরণে মানত করতে বটতলায়। অনেকেই প্রসাদ খেতে ব্যস্ত।
শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব ধর্মের হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত চারিপাশ।
গতকাল মঙ্গলবার মানিকগঞ্জের ঘিওরে তিনশ বছরের পুরাতন এই সম্প্রীতির উৎসব
অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের বাষ্টিয়া গ্রামে প্রাচীণ
কালীবাড়ি বটতলায় একদিনের এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে সুদীর্ঘকাল থেকে।
বটগাছটি কবে জন্মেছিল, কবে থেকে এ উৎসবের শুরু – তা নিয়ে রয়েছে স্থানীয়
লোকজনের নানা মত। তবে আয়োজকদের দাবী, তিনশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে
এই উৎসব।
স্থানীয় প্রবীণরা জানান, প্রয়াত ভাষান সোম, উপেন্দ্র সরকার, কৃষ্ট সরকার,
সুরেশ চন্দ্র গোস্বামী ও ননী গোপাল মৌলিক এই বটতলায় পূজা ও উৎসবের প্রচলন
করেন। এরপর থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসছে সার্বজনীন এই উৎসব।
সরজমিন দেখা যায়, তিনশ বছরের সম্প্রীতির উৎসবে মানুষের ঢল নেমেছে।
স্থানীয় দূর্গাবাড়ি, বাষ্টিয়া, ভালকুটিয়া, জাবরা, বানিয়াজুরী, বালিয়াখোড়া
গ্রামবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে এই উৎসব। বিশাল বটতলার
আঙিনাজুড়ে হরেক পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানীরা। সকাল থেকে শুরু হয়ে রাত
১০টা পর্যন্ত চলে উৎসব। তবে বেশি দর্শনার্থী আসেন দুপুরের পর থেকে।
বানিয়াজুরী দূর্গাবাড়ি গ্রামের বাদল সরকার বলেন, এটি আমাদের ঐতিহ্য – বড়
একটা উৎসব। পূর্ব পুরুষরা পালন করেছেন, আমরাও করছি। পরবর্তী প্রজন্মরাও
পালন করবে। এ উপলক্ষ্যে কয়েক হাজার দর্শনার্থীদের একসাথে খাবার দেয়া হয়।
আশেপাশের গ্রামগুলীর বাড়িতে উৎসব শুরু হয়। মেয়েরা তাঁদের বাবার বাড়িতে
নায়োর আসেন। দূরদূরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে আসেন।
আয়োজকদের একজন তুষ্ট মন্ডল বলেন, এখানে কোন প্রতীমা নেই, এই বটগাছকেই
বিগ্রহ মনে করে কালীপূজা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এ উপলক্ষ্যে বসে
মেলা। এবারো উৎসবে বেশ কয়েকটি দেশের মানুষসহ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত
থেকে বাদ্য বাজিয়ে, মানতের উপকরণ নিয়ে ভক্ত অনুরাগীরা ছুটে এসেছেন।
মূলত মনের আশা পূরণে এই বটতলায় পূজা, মানত ও প্রসাদ বিতেণের রেওয়াজ
সুদীর্ঘকাল থেকে চলে আসছে।
পূজারী গৌতম চন্দ্র মৌলিক বলেন, আমার দাদা ননী গোপাল মৌলিক এখানের পূজারী
ছিলেন। দাদার মুখে শুনেছি, তিনিও তার পূর্বপুরুষদের কাছে এই উৎসবের কথা
শুনেছেন। সে সময় শুধু হিন্দু ধর্মের মানুষ এখানে পূজা, মানত ও প্রসাদ
সেবা নিতে আসতেন। তবে এ উৎসব এখন আর কোনো ধর্মের মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ
নেই। সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন হয়ে উঠেছে।
উৎসবে আসা শিক্ষার্থী সোমা, পূজা সরকার, সানজিদা, রুপম বলেন, ছোটবেলা
থেকেই এই উৎসবে আসি। এখানে বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় অনেক আনন্দ হয়। ইচ্ছা
পূরণে মানত করি। প্রসাদ খাই।
জাবরা গ্রামের ব্যবসায়ী সুমন দাস বলেন, প্রতি বছর এই দিনটার জন্য
প্রতীক্ষা করি। মায়ের কাছে মনখুলে প্রার্থনা করে অনেক কিছু প্রত্যাশা
করি। এখানে এসে মানত করে কেউ খালি হাতে ফিরে না।
বাষ্টিয়া গ্রামের ইকবাল হোসেন বলেন, এটি সার্বজনীন উৎসব। সব ধর্মের
মানুষজনের উপস্থিতিতে উৎসবটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।
স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান বলেন, এই উৎসবটি
খুব পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী। পৌষের চাঁদে এ উৎসব হলেও এবছর মাঘ মাসে
অনুষ্ঠিত হলো। দেশের বিভিন্ন এলাকা মানুষজন এসেছেন।
Posted ১১:১০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৪
Desh24.news | Azad
.