বৃহস্পতিবার ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় রেমাল’র তান্ডবে কলাপাড়া উপকূলে ধ্বংসের ছাপ; ক্ষয় ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০০ কোটি টাকা

এস এম আলমগীর হোসেন, কলাপাড়াঃ   |   মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪ | প্রিন্ট  

ঘূর্ণিঝড় রেমাল’র তান্ডবে কলাপাড়া উপকূলে ধ্বংসের ছাপ; ক্ষয় ক্ষতির পরিমান প্রায় ১০০ কোটি টাকা
কলাপাড়া উপকূলে ঘূর্নিঝড় রেমালের তান্ডবে দুর্গত এলাকার মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়ী ঘরে ফিরলেও এখনও আতংক যেন তাদের পিছু ছাড়েনি। সমুদ্র উপকূল ও নদীপাড়ের গ্রাম গুলোতে শুধু ধ্বংসের ছাপ। অনেকের রান্নার চুলা আজও জ্বলেনি। জ্বলোচ্ছাসের আঘাতে নদীপাড়ের দুর্গত এসব পরিবারের যেন কান্নার শেষ নেই। উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষের জীবন যাত্রা সচলে দুর্যোগ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পাশাপাশি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা দিন রাত কাজ করে চলেছেন। ঘূর্নিঝড় রেমালের তান্ডবে পাউবো’র বেড়িবাঁধ সহ মৎস্য, কৃষি, শিক্ষা, সড়ক, বিদ্যুত খাতে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী উপকূলের জনপদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্টদের ক্ষয় ক্ষতির তালিকা নিরুপন করে দ্রুত সমাধানের লক্ষ্যে স্ব স্ব দপ্তরে প্রেরনের নির্দেশনা দিয়েছেন স্থানীয় সাংসদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রান প্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মো: মহিব্বুর রহমান এমপি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, ঘূর্নিঝড়ের প্রভাবে অস্বাভাবিক জ্বলোচ্ছাস ও অতিবর্ষনে উপজেলার ধূলাসার, লালুয়া, বালিয়াতলি, লতাচাপলি, ধানখালী, চম্পাপুর, মহিপুর ও নীলগঞ্জ ইউনিয়নে ৪ হাজার ৬ শত ৯০টি পুকুর, যার আয়তন ৪১০.২৫ হেক্টর এবং ৭৭৮টি ঘের, যার আয়তন ৪৩৮.৮০ হেক্টর, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মৎস্য খাতে প্রায় ২৫ কোটি ৮ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্র জানায়, রেমাল’র তান্ডবে অসংখ্য বৈদ্যুতিক খূঁটি ভেঙ্গে পড়েছে, গাছ পড়ে তার ছিড়ে গেছে, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে, মিটার ও ইনসুলেটর ভেঙেছে এতে উপকূলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ভেঙ্গে পড়েছে। যাতে ক্ষতির পরিমান ১০ লক্ষ টাকা।
উপজলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আরাফাত হোসেন জানান, রেমাল’র তান্ডবে উপজেলায় ১৮০ হেক্টর আবাদি জমির শাক সবজি, ৫৮ হেক্টর জমির পাট, ২৫ হেক্টর জমির পেঁপে, ৫০ হেক্টর জমির কলা, ১০ হেক্টর জমির তিল, ১৫০ হেক্টর জমির আম, ১০৬ হেক্টর জমির আউশ বীজতলা, ১৭৮ হেক্টর জমির আউশ আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এতে কৃষি খাতে মোট ক্ষতির পরিমান ৮ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো: আবুল হোসেন জানান, ঘূর্নিঝড় রেমাল’র আঘাতে ১৮০০ কি.মি. সড়ক সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্ত, ৪০০ কি.মি. সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমান ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কলাপাড়া জোনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: শাহআলম বলেন, ঘূর্নিঝড় রেমাল’র তান্ডবে উপকূলের ৩০ টি স্পটে ১০ কি.মি. বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনুমান ১৩ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত গৈয়াতলা ও জালালপুর ৪৬ নম্বর পোল্ডার, ধূলাসার ও বালিয়াতলি ৪৭/৪ নম্বর পোল্ডার। চরমোন্তাজ ৫৫/৪ নম্বর পোল্ডার, আন্ডার চর ও চালিতাবুনিয়া ৪৯ নম্বর পোল্ডার।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো: মনিরুজ্জামান জানান, উপজেলার ৪টি কলেজ, ১২টি স্কুল ও ২৫টি মাদ্রাসা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস ¬জানান, ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আংশিক ক্ষতি হয়েছে, যাতে ক্ষতি হয়েছে ৩৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। উপজেলা প্রানী সম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, রেমাল’র তান্ডবে মৃত/ ভেসে যাওয়া ভেড়ার সংখ্যা ৯৬০টি, ছাগল ৩০টি, মহিষ ৪টি ও গরু ৪টি, হাঁস ৪৬০টি, মুরগি ২৪৮টি। এতে প্রানী সম্পদের ক্ষয় ক্ষতির পরিমান প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। বন বিভাগের কলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: মনিরুল হক বলেন, ঘূর্নিঝড় রেমাল’র তান্ডবে ১১০ সি.কি.মি. গোলপাতা গাছ, ৩১৪ সি.কি.মি. ষ্ট্রীপ বাগান, ২০ হেক্টর ঝাউবাগান, ১৭০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান সহ সামাজিক বনায়নের ৩৪ লক্ষ ৩৫৯ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় রোমাল’র তান্ডবে উপজেলার ১৬৭১টি ঘর বাড়ী সম্পূর্ন এবং ২৬ হাজার ৯টি ঘর বাড়ী আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান ৩০ কোটি টাকা। উপজেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা দাড়িয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন সূত্র। দুর্গত এসব মানুষের কাছে ত্রান সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন সহ জন প্রতিনিধিরা।
উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রান কর্মকর্তা মো: হুমায়ুন কবির বলেন, ’ঘূর্নিঝড় শেষে দুর্গত মানুষের সহায়তায় ১০০ মে.টন চাল ও নগদ দেড় লক্ষ টাকা হাতে পেয়েছি। এছাড়া আরও নগদ ৫ লক্ষ টাকা, গো-খাদ্যের জন্য ২ লক্ষ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লক্ষ টাকা, আরও ২০০ মে.টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কলাপাড়া ইউএনও মো: রবিউল ইসলাম বলেন, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বদা দুর্গত মানুষের পাশে আছি। আমরা দুর্যোগকালীণ সময়ে ও পরে দুর্গত মানুষকে শুকনো খাবার, ত্রান সুবিধা সহ রান্না করা খিচুড়ী প্যাকেট সরবরাহ করেছি। দুর্গত মানুষকে ত্রান দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র আগামী দুই এক দিনের মধ্যে কলাপাড়া পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে।
Facebook Comments Box

Posted ৭:৪১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০২৪

Desh24.news |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
এম আজাদ হোসেন সম্পাদক ও প্রকাশক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

শ্রীসদাস লেন,বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০/ ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

হেল্প লাইনঃ +৮৮০১৯১১৪৭৭১৪১/০১৯১১২২৭৯০৭

E-mail: infodesh24@gmail.com