ডেস্ক রিপোর্ট | বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার বীর বাঙালিদের স্মরণের মধ্য দিয়ে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৬টার পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সেই বীর সেনানীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান শহীদ বেদীর সামনে নীরবে দাঁড়িয়ে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদ, সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোন এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা।
তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল এ সময় সামরিক কায়দায় সালাম জানায়। শহীদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।
এরপর পর্যায়ক্রমে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি এবং বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে পরিদর্শন বইয়ে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন।
সাভারের আনুষ্ঠানিকতা সেরে সকাল ৮টার পর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে দলীয় প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ভোরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয় বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির আনুষ্ঠানিকতা। একই সময়ে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শুরু হয় শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব।
শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রধান বিচারপতি ও তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষও একে একে সুশৃঙ্খলভাবে শ্রদ্ধা জানান শহীদদের প্রতি।
পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটাতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতার জন্য যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা সফল পরিণতি পায় নয় মাস পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে।
সেদিন ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন যুদ্ধে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী।
তাই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস; বিশ্বের হাতেগোনা যে কটি দেশের স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি বিজয় দিবসের মতো উৎসবের উপলক্ষ রয়েছে, তার একটি বাংলাদেশ।
এবার বাঙালির মহাবিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে নেয়া হয়েছে দুদিনের অনুষ্ঠানমালা। তাতে যোগ দিতে বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) ঢাকায় পৌঁছেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীর সড়কগুলো সাজানো হয়েছে লাল-সবুজের মনোরম সাজে। সড়কদ্বীপগুলোতে শোখা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধু আর প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত বিলবোর্ড। বিভিন্ন স্থাপনায় হয়েছে আলোকসজ্জা।
সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে হবে বিজয় দিবসের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ, যাতে প্রথমবারের মতো বন্ধু দেশ ভারত, ভুটান, রাশিয়া ও মেক্সিকোর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদেরও দেখা যাবে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করবেন; প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত থাকবেন।
পরে গণভবনে বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরক ডাকটিকেট অবমুক্ত করবেন শেখ হাসিনা।
জাতির পিতা ব্ঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশের পর্যটন ব্র্যান্ড নেইম ‘Mujib’s Bangladesh’ সংবলিত লোগো উন্মোচন এবং এ বিষয়ে প্রকাশিত স্মারণ ডাকটিকিটও তিনি অবমুক্ত করবেন।
বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় হবে এবারের মূল আয়োজন। বিকাল সাড়ে ৪টায় এ অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচালনায় সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথে।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে জাতীয় পতাকা হাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেবে।
শপথগ্রহণশেষে আলোচনা পর্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
প্রথমদিনের অনুষ্ঠান বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হবে এবং রাত ৮টায় শেষ হবে। মাঝে বিকাল ৫টা থেকে ২৫ মিনিট বিরতি থাকবে। পরদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, চলবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
দুইদিনের অনুষ্ঠানমালা বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারসহ বিভিন্ন সম্প্রচারমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
Posted ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২১
Desh24.news | Azad
.