জেলা প্রতিনিধি | শনিবার, ২১ আগস্ট ২০২১ | প্রিন্ট
প্রতিষ্ঠার পর থেকে তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকই মূলত পৌরসভার চেয়ারম্যান হিশেবে কার্যভার পরিপালন করে গেছেন। পরবর্তীতে ১৯৩০/১৯৩২ সাল থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যান পৌরসভা পরিচালনা করে আসছেন। বাংলাদেশ ভূ-খন্ডে বর্তমান মেয়র এই পৌরসভার ব্যক্তি হিশেবে ৫ম ও ১০ম চেয়ারম্যান হিশেবে কার্যভার দেখাশোনা করছেন।
প্রতিষ্ঠার পর প্রথম থেকেই যে একে পৌরসভা হিশেবে অভিহিত করা হতো তা নয়। মিউনিসিপ্যাল বোর্ড, টাউন কমিটি, পৌর পরিষদ ইত্যাদি বিভিন্ন নামের প্রচলন থাকলেও বর্তমানে শহর কেন্দ্রিক এই স্থানীয় সরকারকে পৌরসভা নামেই অভিহিত করা হয়।
প্রথম থেকে চেয়ারম্যান বলা হলেও ২০১১ সাল থেকে দেশের সকল পৌর ও সিটি কর্পোরেশন প্রধানকে `মেয়র` হিশেবেই অভিহিত করা হয়। মেয়র পদবীতে এখন পর্যন্ত দু’জন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এই পৌরসভায়।
নির্বাচিত চেয়ারম্যান/মেয়র হিশেবে এই শহরে অনেকেরই রয়েছে বিশেষ সব উল্লেখযোগ্য অবদান। সেগুলোর বিস্তারিত অন্য কোন দিন। আজ তাঁদের নামগুলো লিপিবদ্ধ থাক।
বৃটিশ আমলঃ
নির্বাচিত ১ম চেয়ারম্যান- খান বাহাদুর দেওয়ান আলাউদ্দিন
আহমদ চৌধুরী (১৯৩২), মৌলভীবাজার আইনজীবী সমিতির প্রথম মুসলমান আইনজীবী, যার নামে বর্তমান মুসলিম কোয়ার্টারে কেবি আলাউদ্দিন রোড নামে একটি সড়কের নামকরণ রয়েছে।
২য় চেয়ারম্যান- বাবু যতীন্দ্র মোহন দেব বি.এ।
৩য় চেয়ারম্যান- বাবু গিরীন্দ্রনাথ ঘোষ।
৪র্থ চেয়ারম্যান- জনাব আব্দুল আজিজ বি.এ.বি.এল। সমশেরনগর রোডস্থ নিবাসী যিঁনি ১৯৩৭ সালে প্রথম ভারত শাসন আইন এর অধীনে আসাম পার্লামেন্টে আমাদের মেম্বার অব পার্লামেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
পাকিস্থান আমলঃ
১ম চেয়ারম্যান- জনাব আব্দুর রাজ্জাক মোক্তার (১৯৪৭)
২য় চেয়ারম্যান- জনাব আব্দুর রাজ্জাক মোক্তার (১৯৫০)
৩য় চেয়ারম্যান- জনাব ইরেশ লাল সোম চৌধুরী (১৯৫৫)। বর্তমান ওয়েস্টার্ন রেস্টুরেন্টের পাশের গলি সড়কটি উনার নামে নামাংকিত। অখানেই উনার নিবাস ছিলো। এই শহরের বিশিষ্ট আইনজীবী।
৪র্থ চেয়ারম্যান- জনাব সৈয়দ সরফরাজ আলী মোক্তার (১৯৫৯)।
৫ম চেয়ারম্যান- জনাব এম এ রশীদ (১৯৬৫-১৯৭৩)। জানা থাকা প্রয়োজন, শহরের সেন্ট্রাল রোডে পুরনো থানার উলটা দিকে নদী পাড়স্থ যে দোকান কোঠাগুলো দেখা যায় তা এই শহরকে নদী ভাংগন থেকে রক্ষা করতে মূলত উনার উদ্যোগেই নির্মিত হয়। এটা যে কতবড় দূরদর্শী ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিলো তা এই শহরবাসী মাত্রই উপলব্ধি করেন।
স্বাধীন বাংলাদেশ আমলঃ
১ম চেয়ারম্যান- জনাব সাজ্জাদুর রহমান (১৯৭৪)
২য় চেয়ারম্যান- জনাব সাজ্জাদুর রহমান (১৯৭৭)। এই অঞ্চলের শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে এই পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় পৌরসভার নামেই যে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয় তা মূলত উনার উদ্যোগের ফলেই। এই সড়কটির নামকরণ উনার নামে করা যায় কি-না সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। মুসলিম মহিলা মাহফিল ভবনের জন্যে জায়গা বরাদ্দকরণসহ আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানকে উনি পৌরসভার নিজস্ব ভূমি বরাদ্দ করেন।
৩য় চেয়ারম্যান- সৈয়দ মহসিন আলী (১৯৮৪)
৪র্থ চেয়ারম্যান- সৈয়দ মহসিন আলী (১৯৮৯)
৫ ম চেয়ারম্যান- সৈয়দ মহসিন আলী (১৯৯৩)। শহরের বেরীরপার নিবাসী প্রাক্তন এই সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মৌলভীবাজার পৌরসভার সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী চেয়ারম্যান। টাউন ঈদগাহের জায়গাবরাদ্দ, শহরের সুপেয়ো পানির সমস্যা দূরীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ, ফুলেল শহর গড়ে তোলা সহ উনার সময়কালে সবচেয়ে বেশী যেটা উল্লেখযোগ্য ছিলো তা হলো পৌরসভাকে জনমানুষের প্রাণকেন্দ্র হিশেবে গড়ে তোলা। বলা হয়ে থাকে উনার সময়ে পৌরসভায় কেউ খালি মুখে ফিরে যেতে পারেন নি। যারাই উনার আথিতেয়তা ও আপ্যায়ন পেয়েছেন বোধ করি সবাই একবাক্যে তা মেনে নেবেন। জনশ্রুতি আছে গণমানুষের এই চেয়ারম্যানের দরজা সবসময় মানুষের জন্যে খোলা থাকতো। বেরীরপার মোড়কে ‘সৈয়দ মহসিন আলী চত্বর’ কিংবা শহরের শ্রীমংগল সড়ক উনার নামে নামকরণ করে আগামীর মানুষের জন্যে এই নামটি স্থায়ী করা যায় কি-না ভেবে দেখা যেতে পারে।
৬ষ্ঠ চেয়ারম্যান- জনাব মাহমুদুর রহমান (১৯৯৯)। মৌলভীবাজার পৌরসভার আধুনিক যে রূপ বলা হয়ে থাকে ইনিই এর জনক। মৌলভীবাজার পৌরসভার নান্দনিকতা বৃদ্ধি, দু’টি গেট নির্মাণ, পৌর মসজিদ সংস্কার, পৌর হলরুম সংস্কার, বর্তমান বর্ধিত দু’তলা পৌর ভবন নির্মাণ, শহরের শাহী ঈদগাহর শোভা বর্ধনকারী সংস্কার কাজ, নতুনরুপে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংস্কারসহ এই শহরের আমূল নান্দনিকতায় নিরলস কাজ করে গিয়েছেন স্বল্পকালীন এই ব্যক্তিত্ব।
৭ম চেয়ারম্যান- জনাব মোঃ ফয়জুল করিম ময়ূন এম.কম (২০০৪)
৮ম চেয়ারম্যান- জনাব মোঃ ফয়জুক করিম ময়ূন এম.কম (২০১১)। আধুনিক ও নান্দনিক যে পৌরসভা এখন মানুষের চোখকে প্রশান্তি দেয় বোধ করি এর শ্রেষ্ঠ রুপকার ইনিই। উনার সময়ে এই পৌরসভা যে পরিমাণ উন্নয়ন ও নান্দনিকতায় পরিপূর্ণ হয়েছে তা দেশের তৎকালীন যে কোন মফস্বল জেলা শহরের জন্যে বিস্ময়কর। শহরের অভ্যন্তরের সড়ক প্রশস্তকরণ, ফুটপাথ নির্মাণ, রোড ডিভাইডার নির্মাণ, নিয়ন বাতি, শহরব্যাপী প্রশস্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সুপেয়ো পানীয় জলের ব্যবস্থাকরণ, বৃক্ষরোপণ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অঞ্চলে শহীদ স্মৃতিস্মারক সংস্কার, শরের দু’টি প্রধান বাজাত টিসি মার্কেট ও পশ্চিমবাজার মার্কেটে আধুনিক ভবন নির্মাণ, প্রেসক্লাব মোড়ে নিজস্ব জায়গায় সম্পূর্ণ নতুন একটি মার্কেট নির্মাণ, স্টেডিয়াম মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ, কোর্ট মার্কেট সংস্কার, পৌর বাস টার্মিনাল, মশক নিধন ও বেওয়ারিশ কুকুর নিধন কার্যক্রম, আধুনিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, পৌর সেবক নিবাসের মাধ্যমে সুইপার কলোনি স্থানান্তর, ইমাম মোয়াজ্জিন ভাতা চালু, শ্রেষ্ঠ করদাতাদের রাজকীয় সংবর্ধনাপ্রদান সহ উত্তরোত্তর যেসব কার্যাদি করে গিয়েছেন তা এই শহরকে অন্য মাত্রা দিয়েছে যা পরবর্তী প্রতিজনের জন্যে সৃষ্টি করেছে নতুন মাইলফলক। বলা হয়ে থাকে নিজ দলীয় অর্থমন্ত্রী একই এলাকার হওয়ায় কার্যাদি সম্পাদনে নিরংকুশ সাপোর্ট পেয়েছেন, তথাপি এতোসব কার্যাদির উদ্যোগ গ্রহণো নিছক কম কথা নয়।
Posted ৬:২৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২১ আগস্ট ২০২১
Desh24.news | Azad
.