| রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১ | প্রিন্ট
গত ০১/০৬/২০২১ইং তারিখে রাজশাহী জেলার কাশিয়াগাঙ্গা থানার আলিগঞ্জ বাগানপাড়া নিমতলা মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। যৌতুক না দেওয়াতে স্কুল শিক্ষিকা নির্যাতনের স্বীকারের ঘটনা বাংলাদেশের সকল শিক্ষক সমাজকে আঘাত করেছে। এ যেন সকল শিক্ষক সমাজের কষ্ট। এমনই একজন নির্যাতিত শিক্ষিকা মোছাঃ ইসরাত জাহান (ইভা)(৩৩) এর স্বাক্ষাৎকার হুবুহু তুলে ধরা হল।
গত ০৬/০১/২০২১ ইং তারিখে আনুমানিক বিকাল ০৪ ঘটিকার সময়ে মোছাঃ ইসরাত জাহান (ইভা)(৩৩) যৌতুক না দেওয়ার জন্য স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকজনের দ্বারা নির্যাতনের স্বীকারের কথা জানিয়ে তার উপযুক্ত বিচার নিশ্চিতের জন্য সহযোগিতা চেয়ে সম্মিলিত সাংবাদিক পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক জনাব মোঃ শাহ আলম খান সাহেবকে মুঠোফোনে ফোন করেন।
পরে জনাব মোঃ শাহ আলম খান বিষয়টি ০৭/০১/২০২১ইং তারিখে রাজশাহী মহানগর কাশিয়াগাঙ্গা থানার অফিসার ইন চার্জ জনাব মোঃ মাসুদ পারভেজ মহোদয়কে মুঠোফোনে অবহিত করেন। অফিসার ইন চার্জ জনাব মোঃ মাসুদ পারভেজ মহোদয়কে মুঠোফোনে বলেন যে নির্যাতিত স্কুল শিক্ষিকাকে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করতে।
তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি থানার ডিউটি অফিসারকে অবগত করিলে তিনি ভিক্টিমকে ফোনকরে থানার লোকেশন দিলে ভিক্টিম থানায় এসে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ওসিসি বিভাগে ৪১ নং ওয়ার্ডে ইউনিট বি-০৪ এ ভর্তি হয়ে ০৭/০১/২০২১ ইং তারিখ হতে ০৯/০১/২০২১ ইং তারিখ দুপুর ০২ ঘটিকা পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে পুনরায় থানায় অবহিত করে মামলা দায়ের করেন।
পরে বিষয়টি নিশ্চিত হবার জন্য সম্মিলিত সাংবাদিক পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক, বিডিনিউজ৯৯৯ডটকমের সম্পাদক ও প্রকাশক, সেফনিউজ২৪ডটকমকে চীফ রিপোর্টার, ঢাকা প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য, স্যোসাল রাইট্ কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসার, সংবাদ মিডিয়া স্যাটেলাইট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও দৈনিক ভোরের পাতার সাবেক রিপোর্টার জনাব মোঃ শাহ আলম খান নির্যাতিত স্কুল শিক্ষিকা মোছাঃ ইসরাত জাহান (ইভা)(৩৩) এর ০৯/০১/২০২১ইং তারিখে বিকাল ০৪ ঘটিকায় ২৪.২৯ মিনিটের একটি স্বাক্ষাৎকার নেন।
উক্ত স্বাক্ষাৎকারে ইভা বলেন গত ১৭/০৩/২০১১ইং তারিখে পারিবারিক ভাবে মোঃ সিদ্দিক হোসেন, পিতা মোঃ নাজিম উদ্দিন, সাং-আলিগঞ্জ বাগানপাড়া নিমতলা মোড়,থানা-কাশিয়াডাঙ্গা, মহানগর রাজশাহী, এর সাথে ইসলামি ধর্মীয় মেতাবেগ বিয়ে হয়। বিয়ের ০২ মাস পর থেকেই যৌতুকের জন্য তার স্বামী সিদ্দিক বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে আসিতেছে।
শুধু মাত্র তার প্রথম ছেলে সন্তান অহির জন্য তিনি এই অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছিলেন। এমনকি এই ধারাবাহিক যৌতুক না দিতে পারায় ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষিকা ইভাকে তার স্বামী তার শাশুড়ি সেলিনা বেগম, দেবর আরিফ ও শশুর নিজাম উদ্দিনের প্ররোচনায় ও সহযোগিতায় তাকে ২০১৭ সালে আঘাত করে ঘাড়ের স্পাইনাল কর্ডের ক্ষতিগ্রস্ত করে যার ব্যাথার জন্য আজ ও ইভা কাতরাচ্ছে।
স্বামীর সুখ পাবার জন্য ইভার মা বিয়ের পরপরই তার স্বামী সিদ্দিককে প্রায় ০১ ভরি সোনার গহনা দেন যা পরবর্তীতে সিদ্দিক তা বিক্রি করে ফেলে।
শুধু তাইনয় ইভা স্বামী ও শশুর বাড়ির একটুখানি সুখ পাবার জন্য নিজে ২০১৬ সাল থেকে স্কুলের চাকুরী করে বেতনের সমস্ত টাকা এখন পযর্ন্ত স্বামীর সংসারে খরচ করে যাচ্ছেন।
কিন্তু এতো কিছু করার পর ও ইভা না পেল শশুর বাড়ির আদর না পেল স্বামীর আদর। এই ধারাবাহিক যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শেষ কোথায় বলে কান্না অস্ত্রু ভেজা নয়নে ইভা তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অমানবিক নির্যাতনের কথাগুলো যখন বলছিলেন তখন মনেহচ্ছে এ জেন অসহনীয় একটি ঘটনা।
শুধু তাইনয় বিয়ের পর থেকে ইভা আনুমানিক ১০০ বারের উপরে অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন। তার নির্যাতনের পরবর্তী চিকিৎসার কাগজপত্র ই আছে বস্তা খানেক। আর চিকিৎসার জন্য অগুনতি টাকা ও শেষ করতে ভুক্তভোগী ইভার বাবা মাকে।
ইভার বাবা হলেন বিজিবি এর অবসর প্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার। তিনি বতর্মানে রহমান জুট স্পিনাস (প্রাঃ) লিঃ মাহিন্দ্রা রাজশাহী তে চাকুরী করেন। শুধু মাত্র সামাজিক মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে ইভা ও ইভার বাবা মা সকল অত্যাচার সহ্য করে যাচ্ছিলেন।
মেয়ের সংসারের সুখের দিকে তাকিয়ে ইভার মা ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে তার যমুনা ব্যাংকের রাজশাহী আলুপট্টি শাখার মেয়ের নামের এফডিআর ভেঙ্গে ২৪০০০০ টাকা ইভার স্বামীকে দেয় এবং উক্ত টাকার দেওয়ার পর টাকার জন্য পুনরায় যৌতুকের জন্য ইভাকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। শেষ পযর্ন্ত ইভা ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে তার ব্যাক্তিগত যমুনা ব্যাংকের রাজশাহী আলুপট্টি শাখার সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ২০০০০০ টাকা তার শশুরকে দেন।
২০২০ সালে উম্মে হাফসা সিদ্দিকা নামক একটি কন্যা সন্তানের মা হন। গত প্রায় (০৯) বছর যাবৎ ইভা তার সন্তানদের সুখের জন্য সকল প্রকার অত্যাচার সহ্য করে আসিতেছিলেন। কোথায় তার সুখ! এতকিছু করার পরও আমার মেয়ের কপালে সুখ হয়নি! ইভার ০৭ বছরের ছেলে অহি ও তার এক সাক্ষাৎকারে বলে তার বাবা শুধু তার মাকে প্রতিদিন ই মারধোর করতো। আর আহি যখন মাকে আগলে ধরতে চাইতো তখন তার বাবা তাকেও মারপিট করতো। এই কথা অহি বলছিল আর কাঁপছিল। ভয়ে অহির চেহারা মলিন হয়েগেছে।
এই অত্যাচারের বিবরন এখনো শেষ হয়নি। ভুক্তভোগী ইভাকে যৌতুকের জন্য তার নিষ্ঠুর স্বামী শারীরিক নির্যাতন করতো আর বলতো তুই আমার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারবিনা। যদি আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা করিস তবে আমি জেল থেকে এসে তোকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলবো। তোর পরিবারের সবাইকে শেষ করে ফেলবো।
গত ০৬/০১/২০২১ ইং তারিখে রাএি আনুমানিক ৮ঃ৩০ ঘটিকার সময় ইভার স্বামীর ভাড়াকৃত জৈনক মোঃ চিশতী (৬৫)এর বাড়ির ৩য় তলায় ঘরের মধ্যে ইভার শাশুড়ি সেলিনা বেগম, দেবর আরিফ ও শশুর নিজাম উদ্দিনের হুকুম ও প্ররোচনায় ইভার স্বামী পুনরায় ৫০০০০০ টাকা যৌতুকের জন্য চাপ দেয়। ইভা তাহা এনে দিতে অস্বীকার করিলে তখন ইভার স্বামী সিদ্দিক এলোপাতাড়ি ভাবে মারধর, চর, থাপ্পড়, কিল, ঘুষি মারপিট করিয়া থুতনির নিচে, মুখমন্ডলে গলায় কালশিরা, জখম করে। ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল ঘুষি লাথি মারপিট করিয়া, শরীরে ছেলা ফোলা জখম করে। এবং হত্যার হুমকি সহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদশন করে।
পরবর্তীতে ইভা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্ৰহণ করে কাশিয়াগাঙ্গা থানায় এসে স্বামী সহ মোট ০৪ জনকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
চিকিৎসার বিষয়ে রামেক এর ওসিসি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকে গত ০৯/০১/২০২১ ইং তারিখে দুপুর আনুমানিক ১.৫০ ঘটিকার সময়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন এই রকম ঘটনার আমারা প্রায় দেখছি। আমারা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠুভাবে তদন্তের জন্য কাশিয়াগাঙ্গা থানা কতৃপক্ষ মেডিকেল রিপোর্ট চাইলে তা আমারা সুষ্ঠুভাবে প্রদান করবো যাতে ভিকটিম সঠিক বিচার পান।
বতর্মানে ইভা ও ইভার বাবা মায়ের আথির্ক অবস্থা খারাপ হওয়ায় যৌতুকের সবর্শেষ ৫০০০০০ টাকা না দিতে পারায় ইভার জীবনসহ ইভার পরিবারের সবার জীবন হুমকির সম্মুখীন। ইভার স্বামী ও শাশুড়ীর লোকজনের জন্য বতর্মানে ইভা ও তার পরিবার আতর্মানবতার জীবন যাপন করিতেছে।
বিষয়টি ০৮/০১/২০২১ইং তারিখে সন্ধ্যার পর কাশিয়াগাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব এস এম মাসুদ পারভেজ মহোদয়ের কাছ থেকে আনুমানিক ৭.০০ ঘটিকায় জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি ঘটনা বিষয়ে কিছুটা অবগত। ভিকটিম এখন রামেকের ওসিসি বিভাগে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা রত আছেন। ভিকটিম মামলা দায়ের করলে আমরা ন্যায় বিচারের জন্য প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্ৰহণ করবো।
ইভা তার এই মানবিক নির্যাতনের চিত্রটি অত্র সংবাদের মাধ্যমে মাননীয় পুলিশ মহা পরিদর্শক মহোদয়, রাজশাহী পুলিশ কমিশনার মহোদয়, রাজশাহী জেলা প্রশাসক মহোদয়, কাশিয়াগাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মহোদয় ও সর্বশেষ মাদার অফ দা হিউম্যানেটি বাঙ্গালীর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর কন্যা বাঙ্গালী জাতির গর্ভ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি হস্তক্ষেপ কমনা করছেন যাতে এই মামলার সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হয়ে এই মামলার আসামীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পায়।
তাদের শাস্তি দেখে আর কোনো অপরাধী এই রকম অপরাধ করার সুযোগ না পায়। অভিলম্বে সকল আসামিদের আইনের হেফাজতে না নিলে বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ মানববন্ধনের কর্মসূচি দিবেন বলে মন্তব্য করেন ইভা।
ইভার বক্তব্যে এই কষ্ট শুধু আমার একার নয় এই কষ্ট বাংলাদেশর সকল শিক্ষক শিক্ষিকাদের। সমাজের শিক্ষক শিক্ষিকা রাই পড়াশোনা করিয়ে থাকেন যে যৌতুক কে না বলি। আজ যে শিক্ষিকা সবাইকে যৌতুকের বিরুদ্ধে সচেতন করেন সেই স্কুল শিক্ষিকাই যৌতুকের স্বীকার হয়ে স্বামী ও স্বামীর পরিবার কতৃক নির্যাতিত হয়েছেন।
তাই ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষিকা ইসরাত জাহান ইভা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করছেন।
কাশিয়াগাঙ্গা থানা কতৃপক্ষ এই মামলার ০১ নং আসামীকে গতকাল রাতেই গ্ৰেফতার করে বিচার পরিচালনার জন্য কোর্টে চালান করিলে বিজ্ঞ আদালত আসামি সিদ্দিকের জাবিন না মন্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করায় মামলার ভিকটিম ইভা অত্র নিউজের মাধ্যমে কাশিয়াগাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব এস এম মাসুদ পারভেজ মহোদয়কে ধন্যবাদ জানান। বাকী আসামীদের গ্ৰেফতারের প্রকৃয়া চলছে বলে জানিয়েছেন থানা কতৃপক্ষ।
Posted ৪:০১ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১
Desh24.news | Azad
.