মোঃ শফি আলম, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা | বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১ | প্রিন্ট
অবশেষে মানিকগঞ্জের ঘিওরে পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর পূর্নখনন কাজ শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ধরে এই নদী খনন না করায় ধলেশ্বরী নদী কার্যত মরা খালে পরিণত হয়েছিল। খনন কাজ শেষ হলে নদীর পার্শবর্তী দুই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষ এর সুফল পাবে।
ঘিওর উপজেলার কুস্তা, নারচী, শ্রীধরনগর, মাইলাগী,পূর্বপাড়া এবং বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের এলাকার বহু লোকজন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং হাজার হাজার ফসলী জমি ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দৌলতপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন খলসি ইউনিয়ন,জিয়নপুর ইউনিয়ন,বাঘুটিয়া ইউনিয়ন,চরকাটারি ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা যাতায়াতের জন্য সুগম হবে। রক্ষা পাবে শত শত একর জমির ফসল এবং সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, ৮৮ সালের ভয়াবহ ভাঙ্গনের পর থেকে ভাঙ্গন এলাকার লোকজনের সাথে ঘিওর-খলসী, বিনোদপুর, চরকাটারী , জিয়নপুর,বাঘুটিয়া ইউনিয়নের এলাকার লোকজনের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। সকল প্রকার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ নেমে আসে। বিভিন্ন সময়ে ভাঙ্গন রোধকল্পে ব্যবস্থা গ্রহন করা হলেও বন্যা মৌসুমে এই সমস্ত এলাকার হাজার’ হাজার একর জমি, বাড়ি, ঘর সহ সমস্ত কিছু নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বাড়ি, ঘর হাড়িয়ে বহু লোকজন গৃহহীন হয়ে পরে। অনেক পরিবার আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আবার অনেকে আশ্রয়ন প্রকল্প এবং রাস্তার পাশে কোন মতো জীবন যাপন করছে। বর্ষা মৌসুমে এই অঞ্চলের লোকজনের মধ্যে আতংক দেখা দেয়। অপর দিকে বেদখল হয়ে যাচ্ছে শুকিয়ে যাওয়া ধলেশ্বরী নদীর শত শত একর জমি। চর পরায় স্থানীয় একটি বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট রাতের অন্ধকারে নদী থেকে লাখ লাখ ঘন ফুট বালু চুরি করে বিক্রি করছেন স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। পানির অভাবে ধলেশ্বরী নদী থেকে প্রায় ১০/১২ কিঃ মিঃ এলাকা জুরে বিপুল পরিমান জমি অনাবাদি হয়ে পরেছে। এলাকার সাধারন কৃষকদের চাষাবাদের ক্ষেত্রেও মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। নদী ভরাটের কারনে চরম অস্বিত্ব সংকটে থাকায় ফসলের মাঠে পরিনত হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলার বিরাট অংশের লোকজনের মাছের চাহিদাও জোগান হতো ধলেশ্বরী নদী থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হবার কারনে এবং ড্রেজিং ও কখন না করার কারনে দেশীয় মাছ সংকট দেখা দিয়েছে। জানুয়ারি মাসে পানি উন্নয়ন বিভাগের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা কয়েক দফায় ধলেশ্বরী নদী পরিদর্শন করে। ভাঙ্গনরোধে বিভিন্ন প্রকল্প তৈরি করে তারা কাজ ট্রেন্ডাররে মাধ্যমে ইতোমধ্যে শুরু করেন। তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে ধলেশ্বরী নদী পূর্নখনন কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। খনন কাজ শেষ হলে নদীর গতি পথ ও সঠিকভাবে পানি প্রবাহিত হলে ভাঙ্গনের হাত থেকে এই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ রক্ষা পাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কুস্তা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ ইকরামূল ইসলাম খবির ও আব্দুল মতিন মূসা জানান, ধলেশ্বরী নদীর খনন কাজ শেষ হলে আমাদের এলাকার নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। এবং শুস্ক মৌসুমে এলাকার হাজার হাজার লোকজন উপকৃত হবে।
গত মঙ্গলবার বিকালে মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এ এম নাঈমুর রহমান দুর্জয় ঘিওর –কুস্তা এলাকায় পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর পূর্নঃ খনন ৯.৫০০ কিঃ মিঃ হতে ১১.২০০ এর মধ্যে ০.৫০০ কিঃ মিঃ পর্যন্ত নদী পূর্ন খননের কাজ পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাজের ঠিকাদার জেলা আওয়ামীলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও শিবালয় উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রহিম খান, পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দিন, সংশ্লিষ্ট শাখা কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল আলীম মিন্টু প্রমুখ। উল্লেখ্য, ধলেশ্বরী নদী পূর্ন খননের জন্য মেসার্স আল মামুন ট্রেডার্স ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এবং বালিয়াখোড়া ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২টি কাজ করছেন। গত ৪ এপ্রিল থেকে ধলেশ্বরী নদীর পূর্ন খনন কাজ শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।
Posted ৯:২৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১
Desh24.news | Azad
.