আব্দুর রাজ্জাক, (মানিকগঞ্জ ) | রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৩ | প্রিন্ট
ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে ভ্রমণ উপভোগ করার রাজসিক সময় ঈদের ছুটি। ঈদের দিনের ব্যস্ততা শেষ। এখন কাজ কর্ম কম, রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা। ঈদের পরদিন থেকে এ সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। ঘুরে বেড়াতে পারেন রাজধানীর পাশের জেলা মানিকগঞ্জে।
অবারিত ফসলের মাঠ, আম-কাঁঠালের সবুজ ছায়া, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, গরমে নদীর হিমেল হাওয়া আপনার শরীর ও মনের ক্লান্তি দূর করবে নিমেষে। দেখে যেতে পারেন ঐতিহাসিক দুই জমিদার বাড়ি। সপরিবারে একদিনের এই ভ্রমন যেমন হবে স্বস্তিদায়ক, তেমনি ঈদ উদযাপন হবে উপভোগ্য।
নজরুল-প্রমীলার স্মৃতিময় তেওতা জমিদার বাড়ি :
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়িটির বয়স ৩শ বছর ছাড়িয়েছে। সপ্তদশ শতকের শুরুতে পঞ্চানন সেন (পাঁচুসেন) এই জমিদার বাড়িটি তৈরি করেন। সামনে বর্গাকৃতির অট্টালিকার মাঝখানে আছে নাটমন্দির। পুর্বদিকের লালদিঘী ছিল জমিদারদের অন্দর মহল। অন্দর মহলের সামনে দুটি শানবাঁধানো ঘাটলা, এর দক্ষিন পাশের ভবনের নীচে রয়েছে কুঠুরী। উত্তর ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ৪ তলা বিশিষ্ট ৭৫ ফুট উচ্চতার নবরত্ন মঠ। এর ১ম ও ২য় তলার চারদিকে আছে ৪টি মঠ। জমিদার বাড়িটি ৭.৩৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। সবগুলো ভবন মিলিয়ে এখানে মোট কক্ষ রয়েছে ৫৫টি। জমিদার বাড়ি দর্শন শেষে পাশেই দেখতে পারেন পড়ন্ত বিকেলে যমুনা নদীর নৈসর্গিক দৃশ্য।
তেওতা জমিদার বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে- আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ও তার প্রিয়তমা প্রমীলা দেবীর প্রেমের স্মৃতি। জমিদার বাড়ির পাশেই ছিল নজরুলের স্ত্রী প্রমীলা দেবীর বাড়ি। প্রমীলা দেবীর পিতা বসন্ত সেনের ভ্রাতুষপুত্র বীরেন সেনের সঙ্গে কবির পরিচয় সুত্র ধরে প্রায়ই তাদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন। এভাবেই প্রমীলা দেবীর (ডাকনাম দুলী) সঙ্গে নজরুলের প্রেম। অনেক সাহিত্য বিশারদদের ভাষ্য, প্রমীলা যখন বাড়ির পুকুরে গোসল করতে যেতেন, তখন তার রূপে মুগ্ধ হয়েই হয়তো কবি বলে উঠেছিলেন, “তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়/ সেকি মোর অপরাধ”?
যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে আরিচার দূরত্ব ৯০ কিঃ মিঃ। প্রাইভেটকারে সময় লাগে দেড় থেকে দু ঘন্টা। ৩ ঘন্টায় বাসে যেতে ভাড়া দিতে হবে ২শ টাকার মতো। গাবতলী থেকে যাত্রীসেবা, সেলফি, নীলাচল, পদ্মা লাইন, নবীন বরণসহ দূরপাল্লার বাসে আরিচা ঘাট যেতে হবে। আরিচা ঘাট থেকে অটো/রিকশায় ৩০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যাবে তেওতা জমিদার বাড়ি।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি :
গোটা দেশে যে কয়েকটি প্রাচীণ নিদর্শণ রয়েছে তার মধ্যে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার বালিয়াটী জমিদার বাড়ি অন্যতম। সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ব্যাপক সংষ্কার করেন। এখন তা নতুন সাঝে সজ্জিত হয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করছে। দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক এ বড়িতে ঢুকেই কারুকাজ দেখে বিস্ময়ভরা চোখে তাকিয়ে থাকেন। ঊনবিংশ শতক থেকে বিংশ শতকের প্রথমভাগের বিভিন্ন সময়ে এটি নির্মিত হয়েছিল। রয়েছে ৪টি বৃহদাকার সুদর্শন অট্টালিকা। প্রত্যেক অট্টালিকায় ঢোকার জন্য রয়েছে ভিন্ন চারটি প্রবেশদ্বার। প্রত্যেকটি দ্বারের ওপরে রয়েছে একটি করে সিংহ মূর্তি যা দেখলে অনেকটা জ্যান্ত মনে হয়। চারদিকে সীমানা প্রাচীর ঘেরা প্রায় ২০ একর বাড়ীটির ভিতরে রয়েছে আরও ৩টি ভবন। প্রত্যেক ভবনের ছাদে উঠার জন্য রয়েছে শাল আর সেগুন কাঠ দিয়ে নির্মিত সিঁড়ি। সামনের চারটি ভবনের দ্বিতীয় ভবনে রয়েছে তাদের নির্মিত প্রমোদগার বা রংমহল। জমিদারদের ওই সময়ে ব্যবহৃত আসবাবপত্র দিয়ে এ কক্ষটি এখনো সাজানো রয়েছে। সাতটি ভবনের মধ্যে চারটি ছাড়া বাকী ভবনগুলি বসবাসের অনুপযোগী। বাড়ীর ভিতরে রয়েছে মনোরম পরিবেশে আম, কাঠাল, বেল, লিচ, জাম্বুরা গাছ সহ হরেক রকম ফল আর ফুলের গাছ। সামনে দু’ঘাটলা বিশিষ্ট বিশাল পুকুর।
এ প্রাসাদের পাশেই জমিদার বাবুর ভাগ্নে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামে ”ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়”। দেশের খ্যাতিমান পরিচালকদের চলচ্চিত্র, নাটক, টেলিফিল্ম, প্রামান্ন চিত্র নির্মানের শুটিং করতে প্রায়ই দেখা যায় এ বাড়ীতে। ইতিহাসের নিদর্শন হিসেবে ২০১১ সালে পরিচালক হানিফ সংকেত ”ইত্যাদি” সবটুকু চিত্রায়নই এ প্রাসাদের সামনে করেন। কালজয়ী ছবি বেহুলা লক্ষিন্দর, জীবন সিমান্তে-সহ অসংখ্য চলচিত্রের শুটিং হয়েছে এখানে।
জমিদার বাড়ির মুল ফটকের আঙিনা ঘেষে গড়ে উঠেছে বেশকিছু হোটেল-রেস্তোরা। পাবেন মানসম্পন্ন খাবার। প্রাসাদে ভ্রমনে এলে দর্শনার্থীরা প্রসংশা করে গাভীর দুধের তৈরী বিখ্যাত ”ছানা সন্দেস” খেয়ে। এছাড়াও প্রাসাদের ফটকের বাইরে বসে হরেক রকম মুখরোচক খাবার ও প্রসাধনীর পসরা।
যেভাবে আসবেন :
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কালামপুর হয়ে সাটুরিয়া অথবা মহাসড়কের নয়াডিঙ্গী/ গোলড়া বাসষ্ট্যান্ড থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে মনোরম পরিবেশে এ প্রাসাদের অবস্থান। ঢাকার গাবতলী থেকে সাটুরিয়া যাওয়ার বাস পাওয়া যায়। জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১২০ টাকা। সাটুরিয়া পৌঁছে সেখান থেকে রিকশা বা রিকশা, সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা দিয়ে জমিদার বাড়ি যাওয়া যাবে। প্রবেশের জন্য টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা আর বিদেশীদের জন্য জনপ্রতি ২শত টাকা।
Posted ৯:৪৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৩
Desh24.news | Azad
.