ডেস্ক রিপোর্ট | রবিবার, ০১ মে ২০২২ | প্রিন্ট
আব্দুর রাজ্জাক, মানিকগঞ্জ :
আমাদের চারিপাশে কত সমিতি! সব পেশারই একটা-দুটো করে সমিতি রয়েছে। তবে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠেছে এক ধরনের ব্যতিক্রমী সমিতি। মাসে মাসে সঞ্চয় করে বছর শেষে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন সমিতির সদস্যরা। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের আর্থিক চাপ একদিকে কমে, তেমনি ঈদের আগে পান বাড়তি আনন্দ। স্থানীয়দের ভাষায় এই সমিতির নাম “মাংস সমিতি”, অনেকের কাছে “গরু সমিতি” নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
সারাদিন ভ্যান চালিয়ে সংসারের ঘানি টানেন বানিয়াজুরীরর শামসুল ইসলাম। সন্তানের লেখাপড়ার খরচা।এনজিও’র কিস্তি সব মিলিয়ে অনেকটা নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। ঈদ আসলে সকলের কাপড়-চোপড় কেনা আর তেল-সেমাই-চিনি কিনতে গিয়ে হিমশিম খান তিনি। আদরের সন্তানদের বায়না থাকে ঈদের দিনে গোশত খাওয়ার জন্য। কিন্তু ভ্যান চালক বাবার সাধ থাকলেও অনেক সময় সাধ্যে কুলায় না। গত ঈদুল ফিতরে সন্তানের বায়না পূরণ করতে না পেরে এবার বানিয়াজুরী বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় গোশত সমিতির সদস্য হয়েছেন তিনি। শুধু দিনমজুর শামসুল নন, ঘিওরের ৭ টি ইউনিয়নের ১৮৫টি গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবার এখন গোশত সমিতির সদস্য।
ঈদুল ফিতরের ঈদকে ঘিরে এই ‘গোশত সমিতি’এখন ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। কমপক্ষে ২০টি সমিতির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছর পাঁচেক আগে উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকটি এলাকায় এ ধরনের সমিতি চালু হয়। পরে প্রতিবছর সমিতির সংখ্যা বাড়তে থাকে। এ বছর সমিতির সংখ্যা দেড় শতাধিক। এ ধরনের সমিতিতে সাধারণত সদস্যসংখ্যা ২০ থেকে ৬০ জন পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাঁরা প্রত্যেকে প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে চাঁদা জমা দেন। পরে জমা করা টাকায় ঈদের দু-এক দিন আগে গরু, মহিষ বা ছাগল কিনে এনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন তাঁরা। শুরম্নতে শুধু নিম্নবিত্তের লোকেরা এ ধরনের সমিতি করলেও এখন মধ্যবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তের মধ্যেও আগ্রহের সাথে এ ধরনের সমিতিতে যোগ দিচ্ছেন।
উপজেলার রাথুরা গ্রামের গৃহবধূদের নিয়ে গোশত সমিতির যাত্রা শুরম্ন হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরজমিন গিয়ে জানা যায়, সব সদস্যরা খুশি মনে সুশৃঙ্খলভাবে গোশত ভাগ করে বিলি করছেন। এই এলাকায় এবার ৪ টি সমিতি হয়েছে। এই সমিতির মূল উদ্যোক্তা মর্জিনা বেগম জানান, গত বছর সমিতিতে সদস্য সংখ্যা ছিল ২০ জন। এবার ৩৫ সদস্য, চাঁদা মাসে জনপ্রতি ৩শ টকা করে। বছরে জমা হয় ৩৬০০ টাকা। বড় একটি গরু কিনে এনে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের ভাগে সাত কেজি করে মাংস পড়েছে। তুলনামূলক বাজার দরের চেয়ে কম দামে এবং সঞ্চয়ের টাকায় এক সাথে এতখানি গোশত পেয়ে তারা খুব খুশি।
এছাড়া বানিয়াজুরী, বালিয়াখোড়া, সিংজুরী, নালী, বড়টিয়া, পয়লা, ঘিওর সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ সমিতি গড়ে উঠেছে। শবে কদরের দিন থেকে শুরু হয় সমিতির পশু জবাইয়ের কাজ। চলে ঈদের দিন পর্যন্ত।
মাইলাঘী এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বলেন, ঈদের আগে নানা কিছু কেনাকাটায় টাকা শেষ হয়ে যায়। এ সময় তাঁদের মতো নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে গরুর মাংস কেনা অসম্ভব হয়ে পড়ে। নারীরা সমিতি করার কারণে ঈদের আগে পরিবারের পুরুষদের অনেক চাপ কমেছে। এতে সমিতির সদস্যদের মধ্যে ঈদের আনন্দ বেড়ে যায়।
উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চর বাইলজুরী গ্রামের মাংস সমিতির সভাপতি আল মামুন বলেন, তাঁদের সমিতিতে সদস্যসংখ্যা ৫০জন। প্রত্যেকে মাসিক ৫শ টাকা করে জমা দেন। বছর শেষে সমিতিতে জমা হয় ৩ লাখ টাকা। এই টাকা দিয়ে ছোট বড় ৩ টি গরম্ন কিনে সদস্যদের মধ্যে গোশত ভাগ করে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, তাঁদের ইউনিয়নে এমন অন্ত্মত ১০/১২ টি সমিতি আছে।
সিংজুরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান মিঠু বলেন, এলাকায় গোশত সমিতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দিন দিন এ সমিতির সংখ্যা বাড়ছে। সমিতির কারণে ঈদুল ফিতরে এখন ঘরে ঘরে গরম্নর গোশত থাকে। পরিবারের সবাই আনন্দে এক সাথে খায়।
ঘিওর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যার কাজী মাহেলা বলেন, সারা বছর একটু একটু সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে তাঁরা বাড়তি আনন্দ পেয়ে থাকেন। এতে সংসারের চাপও অনেক কমে যায়। বিশেষ করে নারীদের অংশগ্রহণে যেসব সমিতি রয়েছে, তারাও সংসারে সমতা ও মর্যাদা পায়।
Posted ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০১ মে ২০২২
Desh24.news | Azad
.
.
আর্কাইভ
রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র | শনি |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | |||
৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ |
১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ | ১৭ | ১৮ |
১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ |
২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ | ৩১ |