ডেস্ক রিপোর্ট | শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই। সাধারন মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের মহা উৎসব চলে এই অফিসে। প্রশাসনের লোক দেখানো চেষ্টাও হয় মাঝে মধ্যে তার পরেও বন্ধ হয়না সিন্ডিকেটের চাঁদাবাজি। দলিল প্রতি ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২শ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ টাকার ভাগ পান রাজনৈতিক নেতা, উপজেলা প্রশাসনের কর্তা, রেজিষ্ট্রি অফিসের বড় বাবু, দলিল লেখক, স্থানীয় দালাল’রা। খোদ স্থানীয় সংসদ সদস্য সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ হস্তক্ষেপ করেও দুর্নীতির লাগাম টানতে পারেননি। এমপির হস্তক্ষেপে প্রথমের দিকে কয়েক মাস দুর্নীতির মাত্রা কমে আসলেও পরে আবার শুরু হয় অনিয়ম দুর্নীতির মহোৎসব।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মাধ্যমে জানাগেছে, এবারের চলমান সিন্ডিকেট গড়তে দলিল লেখকদের দুই গ্রæপ নিজেদের স্বার্থেই একত্রিত হয়ে যায়। দুই গ্রæপের দুই নেতা অ-ঘোষিত এই সিন্ডিকেটের সদস্য নির্বাচিত হন। উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের বড় বাবু জান্নাতুন ফেরদৌস মুন্নি এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা বলে জানাযায়। মুন্নির নেতৃত্বে দলিল লেখক পরিচালনা সমিতির সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আরজ উল্লাহ, দলিল লেখক হামিদুল, জহুরুল এবং ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রæপের স্থানীয় দু’ই নেতার যোগসাজসে গড়ে তোলা হয় এই শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তারা দলিল প্রতি সরকার নির্ধারিত ফিস বাদে ১ হাজার টাকা থেকে ১ হাজার ২শ টাকা করে অতিরিক্ত আদায় করছেন। যা সরকার নির্ধারিত খরচের কয়েকগুন বেশি।
জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা সাধারণ মানুষ সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা দিয়েই তাদের জমি রেজিষ্ট্রি করছেন বলে জানান নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কিছু ভুক্তভোগি ।
দলিল প্রতি অতিরিক্ত টাকা আদায় করার ব্যাপারে কথিত দলিল লেখক পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহাতাব উদ্দিন গণমাধ্যম বলেন, কুষ্টিয়ার অন্যান্য উপজেলার চাইতে আমরা তুলনামূলক টাকা কম তুলি। যে অভিযোগ উঠেছে কিংবা শুনেছেন, তা মিথ্যা বলে দাবী করেন তিনি। কথা বলার এপর্যায়ে তিনি তার সাথে একান্তভাবে দেখা করার অনুরোধ করে এই প্রতিবেদকে।
এছাড়া জমি রেজিষ্ট্রিতে টিপসহি নেয়ার ক্ষেত্রেও প্রত্যেকজন জমি বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে আদায় করা হয়। বিপুল অঙ্কের এই টাকা জমা পড়ে বড় বাবু জান্নাতুন ফেরদৌস মুন্নির কাছে। সেখান থেকে সরকারি খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন তারা। স্থানীয় সাংবাদিকদের একাংশের নামেও এই টাকার একটি অংশ বরাদ্দ দেয়া হয় বলে সূত্র জানায়। তবে বেশ কয়েকজন মূলধারার সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বললে তারা এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান এবং এতে করে সাংবাদিকদের মান ক্ষুন্ন হচ্ছে বলেও তারা জানিয়েছেন।
সূত্র মতে আরোও জানাযায়, দলিল লেখক সমিতির দু’গ্রæপের মধ্যে এর আগে আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে মত-প্রার্থক্য চলে আসলেও নিজ নিজ অবস্থান ধরে রেখে তারা অনিয়ম দুর্নীতিতে অপ্রতিরোধ্য সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। গত কয়েকমাস ধরে দলিল লেখকদের দুই গ্রæপ এক হয়ে শুরু করেন লাগামহীন অবৈধ কর্মকান্ড। ইতিপূর্বে এই সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার খবর প্রকাশ হলেও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। শক্তিশালী এই সিন্ডিকেটের অনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে তিন মাসে পরপর তিনজন সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস থেকে স্বেচ্ছায় বদলি হয়ে গেছেন। তবুও এই অনিয়ম বন্ধ হয়নি। সবশেষ কিছুদিন পূর্বে মিরপুর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার রাসেল মল্লিক’কে দৌলতপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সপ্তাহে দুই দিন বুধবার ও বৃহষ্পতিবার জমি রেজিষ্ট্রির কার্যক্রম চালানোর দায়ীত্ব দিলে তিনিও একই নিয়মে চালাচ্ছে দলিল রেজিষ্ট্রি কার্য্যক্রম।
প্রতিটি দলিল থেকে যে অর্থ আদায় করা হয় সেটা ৮টি খাতে ব্যায় হয়। এর মধ্যে বড় বাবু ১০০, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস ৫০০, উপজেলা যুবলীগের প্রভাবশালী নেতাদের ৩০০, উপজেলা প্রশাসন ৫০, লোকাল মসজিদ ৫০, স্থানীয় সাংবাদিকদের একাংশকে ম্যানেজের নামে ৫০, নকল নবীসদের নামে ১০০ ও লোকাল দালাল’রা ৫০ টাকা করে ভাগ পান।
সিন্ডিকেটের কথা স্বীকার করে উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের বড় বাবু জান্নাতুন ফেরদৌস মুন্নি মোবাইল ফোনে বলেন, দৌলতপুর রেজিষ্ট্রি অফিসের পরিবেশ দিন দিন খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও এখান থেকে বদলি হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। জমি রেজিষ্ট্রিতে কয়েকগুণ বাড়তি টাকা ও নিয়মবহির্ভূতভাবে টিপ সহিতে ১৫০ টাকা করে আদায় করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি অফিসে আসেন এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলি। তার অফিসে আসার আমন্ত্রন নাকচ করে দিলে তিনি কথিত দলিল লেখক সমিতির নেতাদের (সিন্ডিকেট সদস্য) সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন।
সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস ও স্থানীয় সিন্ডিকেট যুক্ত হয়ে দলিল রেজিষ্ট্রি কার্য্যে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা সম্পর্কে দৌলতপুর উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার রাসেল মল্লিকের কাছে জানতে চাইলে বিষয়টি জানেন না বলে দাবী করেন তিনি। তিনি আরোও বলেন, যেহেতু উপজেলাটি বড় এখানে দালাল সিন্ডিকেট কাজ করতে পারে বলে জানান তিনি।
Posted ৮:২২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২১
Desh24.news | Azad
.
.