মাহবুব আলম রাসেল | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১ | প্রিন্ট
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনা নদীতে হঠাৎ পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী ভাঙনে বিলিনের পথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাট-বাজার আশ্রয় কেন্দ্রসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
এ বছর বর্ষা মৌসুম শুরু হবার আগেই উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নে যমুনা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলেতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে বাঁচামারা বাজার,বি বি সি ডিগ্রী কলেজ, বাচামরা উচ্চ বিদ্যালয়,বাচামরা হাফিজিয়া মাদ্রাসা,১ নং বাচামরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাময়িক আশ্রয় কেন্দ্রসহ যমুনা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রাম ।
সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকা গিয়ে দেখা যায়, দৌলতপুর উপজেলার যমুনা নদী তীরবর্তী বাঁচামারা ইউনিয়নের বাচামরা গ্রামের অনেক বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি ইতিমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। সকালে যেখানে বাড়ি ছিল বিকালে সেই বাড়ি নদীতে ভেঙে একাকার।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, এ বছর ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারনে হঠাৎ নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আগাম ভাংগন শুরু হয়েছে। বর্ষার শুরুতে যে ভাংগন শুরু হয়েছে তাতে গ্রামবাসীরা অনেকটাই আতংকের মধ্যে রয়েছেন। এবার বর্ষায় নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে ব্যাপক আকারে নদী ভাঙনের সম্ভাবনা রয়েছে। যা পরবর্তীতে শত চেষ্টা করেও ভাঙন রোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই পূর্বেই ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান এলাকাবাসী।
বাচামরা দক্ষিণ পাড়ার সামসুদ্দীন জানান, ভাঙন কবলিত চরকাটারি ইউনিয়নের কাঠালতলা নদীর পানির স্রোত এসব গ্রামের নিকটবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় অনেকেই ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছেন। এ ইউনিয়নের অনেকের বাড়ি ঘর ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।
বাচামরা গ্রামের আব্দুর রশিদ মিয়া জানান, এ বছর বাঁচামরা বাজারের কাছে নদী ভাঙন সর্বকালের ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতি বছর বর্ষায় পানি বাড়ার সময় যেভাবে নদী ভাঙন শুরু হয় এ বছর শুরুতেই তার চেয়ে বেশি ভাংগন শুরু হয়েছে। এবার বর্ষা মৌসুম শুরু হবার আগেই ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা না হলে পানি বৃদ্ধির সময় বাঁচামারা হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা এবং বাগষাইটা গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। নদী ভাঙনের কারণে আমাদেরকে সবসময় আতংকের মধ্যে থাকতে হয়ত। নদীর পাড় এলাকা দিয়ে বেড়ীবাঁধ নির্মাণ এবং নদী শাসন করলে হয়তো নদী ভাঙন রোধ করা সম্ভব হবে। তা না হলে পূর্ব পুরুষের ভিটাবাড়ি, জায়গা জমি সব নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। অবশেষে গৃহহীন হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় থাকবেনা। এমতাবস্থায় নদী ভাঙ্গন রোধে জরুরি ভিত্তিতে নদী শাসনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
স্হানীয় যুবক মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেন, বাচামরা বাজার থেকে বর্তমানে নদীর দূরত্ব মাত্র ৭০ গজ। গত বছর বাজার থেকে ৫০০ গজ দূরে ছিল নদী। আমাদের ইউনিয়নের হাই স্কুল, কলেজ,মাদ্রাসা সবই বাজারের পাশে। বাজার না থাকলে কোন কিছুই থাকবেনা।গত বছর বাজারের কাছে নদীতে কিছু জি ও ব্যাগ এম পি মহোদয়ের তত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেলেছিলেন সেগুলোও নদীতে বিলিন হয়ে পড়েছে। মাননীয় এম পি মহোদয়ের কাছে আকুল আবেদন তিনি যেন অতি দ্রুত পদক্ষেপ নেন। তা না হলে আমাদের ইউনিয়নের ইতিহাস ঐতিহ্য বলতে আর কিছুই থাকবেনা।
দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম রাজা বলেন, এ বছর বর্ষার শুরুতেই উপজেলার বাঁচামারা ইউনিয়নের হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, সাময়িক আশ্রয় কেন্দ্র, মাদ্রাসা এবং চরকাটারি ইউনিয়নের কাঁঠালতলা এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে । আমি ইতোমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ভাঙন রোধে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা ইতিমধ্যে নদী শাসনের জন্য জিও ব্যাগ ফেলা শুরু করেছে। দ্রুত নদী ভাঙন রোধ করতে না পারলে লক্ষ লক্ষ টাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার নদীগর্ভে চলে যাবে এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে এখানকার জন জীবন।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন জানান, দৌলতপুর উপজেলার বাঁচামারা বাজারের কাছে নদী ভাঙন রোধে ৩০০ মিটার এলাকা ১৮০০০ হাজার জিও ব্যাগ পাশ হয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি।
Posted ১২:৪০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই ২০২১
Desh24.news | Azad
.