দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি | রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১ | প্রিন্ট
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রভাবশালীরা সরকারী বিধি লংঘন করে অবৈধ ভাবে স্বরুপপুর ও সাদিপুর এই দুটি গ্রামের মধ্যেই ফসলি জমিতে ৮টি ইটভাটা গড়ে তুলেছে। ফলে, মারত্বক পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি দুটি গ্রামের জনস্বাস্থ্য চরম ঝুকির মধ্যে পড়েছে। এলাকাবাসী এসকল ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।
প্রাপ্ত তথ্যে জানাগেছে, উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে আল সালেহ মামুন, হজমুদ্দিনের ছেলে ইদবার আলী, মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে আনারুল ইসলাম, ও স্বরুপপুর গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে আবু বক্কর অবৈধভাবে সাদিপুর গ্রামের তিন ফসলি জমিতে জনবসতি এলাকায় পাঁচটি ইটভাটা স্থাপন করেছে। পার্শ্ববর্তী স্বরুপপুর গ্রামে মৃত শাসুদ্দিনের ছেলে আব্দুস সাত্তার ও বজলুর রহমান এবং ইয়াকুব হালসানার ছেলে নুরুল ইসলাম তিনটি ইটভাটা স্থাপন করেছেন। ফলে এই দুই গ্রামের রাস্তাঘাট ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।
এদিকে দৌলতপুর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় সম্পুর্ণ আবাদি জমিতে ইয়াছিন আলী, জহুরুল আলম ও আব্দুল্লাহ তিনটি ইটভাটা স্থাপন করেছে। চক দৌলতপুর নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পিছনে রমজান আলী, দৌলতপুর থানার পুর্বপাশে বিএনপি‘র অর্থ সম্পাদক খ্যাত নজরুল ইসলাম উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের ৭৮ নং সোনাইকান্দি মৌজার ৮৮ ও ১ নং খাষ খতিয়ানভুক্ত ১৩১, ২৬৩ ও ২৬৭ দাগের ৬ একর ৫৬ শতাংশ সরকারী জমির উপর অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করেছে। এবং ঐ ইটভাটায় পার্শ্ববর্তী গলাকাটি মাঠের কৃষিজমি থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলিতে করে মাটি কেটে ইট তৈরি করছেন। সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী আবাদি ও কৃষি জমির মাটি ব্যবহার না করার কঠোর নির্দেশনা থাকলেও তিনি সেই নির্দেশনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ইটভাটায় আবাদী জমির মাটি ব্যবহার করছেন। আর সেটা দেখেও না দেখার মত বসে আছে উপজেলা প্রশাসন। এদিকে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে জনবসতীপূর্ন স্থানে এক সপ্তাহ আগে পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার যোগসাজস করে পরিবেশের ছাড়পত্র দিয়েছে ভাটা মালিক নজরুল ইসলাম’কে বলে জানাগেছে। এছাড়া রিফাইতপুর জোয়াদ্দার পাড়া গ্রামে শহিদুল ইসলাম ওলি, পাশ্ববর্তী গলাকাটি মোড়ে ঝুমুর আলী, আব্দুস সালাম ও নজরুল ইসলাম, বড়গাদিয়ায় হাবলু মোল্লা, খলিশাকুন্ডিতে কামাল হোসেন, ডাংমড়কায় কুষ্টিয়া প্রাগপুর সড়কের সাথে খন্দকার আবুল কালাম আজাদ, ফজলুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও জাহাঙ্গীর আলম ফসলি জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করেছেন।
সূত্রমতে জানাযায়, এ সকল ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানোর ফলে একদিকে পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মধ্যে পড়েছে অন্যদিকে জনবসতি এলাকায় অসংখ্য ইটভাটার ফলে সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্ট সহ নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দৌলতপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের টিএইচএ জানান, দীর্ঘদিন ইটভাটার ধোয়া বাতাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করায় শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও নানা ধরণের চর্মরোগে আক্রান্ত হবে। ইটভাটা এরিয়ার মধ্যে থাকা এলাকাবাসীরা জানায়, ইটভাটাগুলোর অধিকাংশের লাইসেন্স না থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া অজ্ঞাত কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। এ ব্যাপারে জানার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ায় যোগাযোগ করা হলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রতিদিন শতশত দশ চাকার ট্রাক ও ট্রলি করে ইট, আবাদী জমির মাটি, বালি ও খড়ি বহনের ফলে রাস্তাঘাট ভেঙ্গে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে সেই সাথে প্রতিদিন ইটভাটার বহনকরা ট্রলি থেকে মাটি রাস্তায় পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা, স্বীকার হচ্ছে সাধারন মানুষ। এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে জনবহুল এলাকা ও ফসলি জমিতে ইটভাটা বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসক সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অনেকবার আবেদন করেও কোন লাভ হয়নি।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Posted ৮:২৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১০ জানুয়ারি ২০২১
Desh24.news | Azad
.