- মানিকগঞ্জের ঘিওরে হঠাৎ করে বেড়েছে গবাদিপশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি)। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের খামারি ও প্রান্তিক কৃষকেরা। পল্লী পশু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ভুল চিকিৎসা ও অর্থ অপচয়ের শিকার হলেও মিলছে কোনো সমাধান।
- এদিকে গত বছরের তুলনায় এবার গরুর ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস।
- উপজেলার বানিয়াজুরী, নালী, বালিয়াখোড়া, ঘিওর সদর, সিংজুরী, পয়লা ও বড়টিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে হঠাৎ করে গবাদিপশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগ দেখা দিয়েছে। আক্রান্তের তুলনায় কম মারা যাচ্ছে গরু। প্রান্তিক কৃষকের পাশাপাশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন খামারীরা।
- সরজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ কৃষকদের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগের প্রতিষেধক না থাকায় অনেককে কবিরাজ ও পল্লী চিকিৎসকের শরনাপন্ন হচ্ছেন। আক্রান্ত গরুর মালিকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে পল্লী পশু চিকিৎসকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। নিম্মমানের ওষুধ দিয়ে খামারীদের সাথে করছে প্রতারনা। অনেক ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার শিকার হতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের।
- উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘিওরে মোট ছোট বড় ১২শ’ ৮০টি খামার আছে। এতে গরুর সংখ্যা ৬৩ হাজার ৪শ ২২টি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ল্যাপি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা অনেক বেশি। গত এক মাসে এ রোগে আক্রান্ত শতাধিক গরুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
- উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের কুশুন্ডা গ্রামের কৃষক মো: তাইজুদ্দিন বলেন, আমার ৬টি গরুর মধ্যে দিন বিশেক আগে দুটি গরুর গায়ে ফোস্কা দেখা দেয়। এলার্জি হয়েছে ভেবে ডাক্তার ডাকি নাই। পরে গরুর মুখে ঘা হয়, পা ফুলে যায়। অবস্থা খারাপ হলে উপজেলা পশু হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তার দেখে বলেন এ রোগের নাম ল্যাম্পি স্কিন। শুনেছি এটি পশুর শরীর থেকে আরেক পশুর শরীরে ছড়ায়। আমার মতো অনেকেই গরুর এই রোগ নিয়ে চরম আতঙ্কে আছেন।
- একই গ্রামের মো: রফিক খানের একটি বাছুর গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মাটিতে শুয়ে আছে। সারা শরীরে ফোস্কা গলে দগদগে ঘা বের হয়েছে। দুদিন ধরে গরুটি কিছু খাচ্ছে না।
- কৃষ্ণপর গ্রামের কৃষক আব্দুল ছাত্তার মিয়া বলেন, আমার তিনটি গরুর মধ্যে, একটি গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়। স্থানীয় পশু ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়েছি। তারপরেও আমার শেষ রক্ষা হয়নি। গরুটি মারা গেছে।
- উপজেলা সদরের খামারী বিপুল বলেন, আমার খামারে মোট ৩০টি গরু আছে। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাবার কারনে গরুগুলো পালন করতে হিমশিম খাচ্ছি। খামারে ল্যাম্পি স্কিন রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়লে আমার পথে বসা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
- উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারন কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ফারুক হোসাইন বলেন, ল্যাম্পি স্কিন গবাদি পশুর নতুন একটি রোগ। যার প্রতিষেধক বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে পাওয়া গেলেও সরকারিভাবে এখনো আসেনি। আক্রান্ত পশুর প্রথমে সামনের পা ফুলে য়ায়। তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে শরীরে বড় বড় গুটি দেখা দেয়। এক সপ্তাহ পরে গুটিগুলো গলে ঘা হয়। ঘা থেকে অনবরত তরল পদার্থ বের হয়। অল্প দিনে গরু শুকিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে মারা যায়। তবে আক্রান্তের চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম।
- ঘিওর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ পার্বতী পাল বলেন, খামারিদের তুলনায় প্রান্তিক কৃষকদের গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগ প্রতিরোধের কোন টিকা নেই। গরুর সঠিক পরিচর্যা, আক্রান্ত পশুকে মশারীর ভেতর রাখা ও বাসস্থান পরিষ্কার পরিছন্ন রাখার মাধ্যমে এ রোগ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব। আমরা মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করে যাচ্ছি। আক্রান্ত গরুর সুচিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, গবাদী পশুর ল্যাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ পশু চিকিৎসকদের এ বিষয়ে গুরুত্বসহকারে কাজ করতে বলা হয়েছে। ভুল ও অপচিকিৎসা দিয়ে কৃষকদের ক্ষতিগ্রস্থকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Posted ৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০২৩
Desh24.news | Azad