আব্দুর রাজ্জাক, (মানিকগঞ্জ ) | বুধবার, ০২ নভেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট
মানিকগঞ্জের ঘিওরে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রতিপক্ষের প্রাণনাশের হুমকির মুখে জন্মভিটে থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এক পরিবার। ভুক্তভোগী পরিবার উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের কাউটিয়া গ্রামের আরশেদ আলীর ছেলে রাসেদ কাজী। আত্নীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন শিশু, নারীসহ ৬ সদস্যের ভূক্তভূগী ওই পরিবারটি। বিচারের দাবীতে ঘুরছেন থানা পুলিশ ও আদালত পাড়ায়।
আর এ সুযোগে প্রতিপক্ষের প্রভাবশালী মো: আলম ও আতাব আলী ওই দিনমজুর পরিবারের জমি দখল করার উদ্দেশ্যে ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার সকালে সরজমিন গিয়ে এর সত্যতা মিলেছে। অসহায় পরিবার নিরুপায় হয়ে তাদের ভিটে বাড়ি ও জীবন রক্ষার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন।
থানায় দেয়া অভিযোগে জানা গেছে, বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আর এস ১৯৬ নং দাগ, খতিয়ান নং-১৭, কাউটিয়া মৌজার সাড়ে পাঁচ শতাংশ ভিটে বাড়ি বংশ পরস্পরায় বসবাস করে আসছে রাসেদ। এই জমির বিরুদ্ধে আদালতে আলমের পিতা আতাব আলী বাদী হয়ে আদালতে একটি রেকর্ড সংশোধনী মামলা করেছেন। প্রতিবেশী আতাব আলী ও তার ছেলে মো: আলম দীর্ঘদিন থেকে রাসেদের জমি দখল করার পায়তারা করে আসছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলমানও রয়েছে। মামলা চলাকালীন সময় প্রতিপক্ষ (আতাব আলী) ওই বাড়ির ঘরে তালা লাগিয়ে দেয়। গাছের ফলমূল নিয়ে যাওয়ার পাশাপশি রাসেদের ভিটে বাড়িতে কৃষি উপকরন রেখে দেয়। সম্প্রতি রাসেদ পরিবার নিয়ে তাদের বাড়িতে আসলে মারধোর করে তাড়িয়ে দেয়। এ বিষয় নিয়ে এর পূর্বে একাধিক বার গ্রাম্য সালিশ বৈঠক হয়।
ভুক্তভোগী মোঃ রাসেদ কাজী বলেন, এই ভিটে বাড়িতে আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে বসবাস করে আসছি। আমাদের দলিল আছে, খাজনা – খারিজও করেছি। বছর খানেক যাবত প্রতিবেশী মোঃ আলম আমার জমিজমা ও ঘর বাড়ি কেনার প্রস্তাব দেয়। এতে আমরা রাজি না হওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আলমের এক ভাই পুলিশে চাকরী করে, সেও আমাকে ভয় দেখিয়েছে। তারপর থেকে তারা এই জমির ভূয়া মালিকানা দাবি করে নানা সময়ে সালিশ বৈঠক করে। তারা আদালতে মামলা করেছে। আমাকে দুইবার পিটিয়েছে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আমার ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। তারা খুব প্রভাবশালী, প্রাণ ভয়ে আমি আমার বোনের বাড়ি সাটুরিয়া উপজেলার পশ্চিম চরতিলি এলাকায় বসবাস করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: বজলু বলেন, এই জমির মালিক দরিদ্র রাসেদ। একাধিকবার এলাকায় ও থানায় সালিশ হয় কিন্তু আতাব আলী ও আলম কোন রায় মানেন না।
এদিকে দিনমজুর পরিবারের ওপর নির্যাতন ও হুমকী দিলে রাসেদ থানা পুলিশের সহায়তা চেয়ে লিখিত আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি (গত রোববার) উভয় পক্ষ ও এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে থানায় বসেন ওসি তদন্ত খালিদ মুনছুর। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান, যে যেখানে অবস্থান ও বসবাস করছেন, তারা সেখানেই থাকবেন। বিজ্ঞ আদালতের রায় যার পক্ষে যাবে জমি তার হবে। রায় আসা না পর্যন্ত রাসেদের ঘরের তালা খুলে দিয়ে তার ভোগদখলীয় পৈত্রিক ভিটায় পূবের্র ন্যায় বসবাস করার সিদ্ধান্ত মেনে নেয় উভয়পক্ষ।
থানার মিমাংসা বৈঠক থেকে এসে আলম ও তার পরিবারের সদস্যরা ঘরের তালা না খুলে উল্টো রাসেদকে বলে, থানায় বিচার দিয়া কি করবি। যদি তোকে মেরে ফেলি, কে বাাঁচাবে তোকে। এরপর চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। প্রাণভয়ে ফের রাসেদ পরিবার নিয়ে জন্মভিটে ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে ওসি তদন্ত খালিদ মুনছুর বলেন, উভয়পক্ষ নিয়ে থানায় বসা হয়। মিমাংসার পর যে সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে, তা আলম ও আতাব আলী বাস্তবায়ন করেননি। উল্টো রাসেদের পরিবারের ওপর মারধোরের অভিযোগে ভূক্তভূগী থানায় লিখিত আবেদন করেছেন। আলম, আতাব আলী, তাহের, সুনাই, চিনু ও সবজেলের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত মো: আলম বলেন, এই জায়গার প্রকৃত মালিক আমরা। রেকর্ড ভুল হওয়ায় তারা মালিকানা দাবি করে। আমরা আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেছি। রাসেদের পরিবারকে নির্যাতন করা হয়নি। ঘরে তালা দিয়েছি কারন এই ঘর আমরা মৌখিকভাবে কিনে নিয়েছি। তালা খুলে দেয়ার থানার সিদ্ধান্ত আমরা মানি নাই।
স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউপির ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মো: লেবু মিয়া বলেন, রাসেদ সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমির মালিক। এখানে দীর্ঘদিন যাবত তারা বসবাস করে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সালিশ এবং থানায়, আদালতে মামলা রয়েছে। অসহায় পরিবারটি নানা চাপে বাড়ি ছেড়ে দূরে আছে।
ঘিওর থানার ওসি মো: আমিনুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। জমি নিয়ে বিজ্ঞ আদালতে মামলার রায় আসলে বোঝা যাবে কে প্রকৃত মালিক। আর হুমকির ফলে ভিটেমাটি ত্যাগ করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। অন্যায়কারী যেই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে ন।
Posted ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০২ নভেম্বর ২০২২
Desh24.news | Azad
.