শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>
ঘিওরের টাইগার লোকমান হোসেন

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অগ্নিঝরা ভাষন শোনার পরে সেনা বাহিনীর চাকুরী ছেড়ে মুক্তিযোদ্ধে যোগদেন

রামপ্রসাদ সরকার দীপু   |   বৃহস্পতিবার, ০৭ মার্চ ২০২৪ | প্রিন্ট  

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের অগ্নিঝরা ভাষন শোনার পরে সেনা বাহিনীর চাকুরী ছেড়ে মুক্তিযোদ্ধে যোগদেন
১৯৭১ সালে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স (সোহরাওয়ার্দী) উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অগ্নিঝরা ভাষন শোনার পরে  সেনা বাহিনীর চাকুরী ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার সিংজুরী ইউনিয়নের আশাপুর  গ্রামের টাইগার লোকমান হোসেন। ১৯৭১’ সালে  তখন লোকমানের বয়স ছিল ২২/২৩ বছর। সে দিনের টগবগে যুবক লোকমান ১৯৬৭ সালে যোগ দিয়ে ছিলেন পাকিস্থানী সেনা বাহিনীতে। সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার পরে তিনি বুঝতে পেরে ছিলেন বাঙ্গালীদের নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। পাকিস্থানীদের হাতে চরম নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে বাঙ্গালীরা। মনের ভীতরে চঁাপা ক্ষোভ নিয়ে সেনা বাহিনীর চাকুরী ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়ি আশাপুরে চলে আসেন। নৌকা চালিয়ে, মাছ ধরে, রাজমিস্ত্রি কাজ করে আবার কখনও ঘেটু যাত্রা পালা করে অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতেন।  চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও তিনি কারও কাছে হাত পাতেনি। দুঃখ কষ্ট করে কাটাতে হয়েছে তার প্রতিটি দিন। গ্রামের সহজ সরল গ্রামবাসীকে ধরে নিয়ে পাকিস্থানী দালাল, রাজাকাররা নির্বিচারে নির্যাতন, অত্যাচার চালাচ্ছে। গ্রামের যুবতি নারীদের ধরে নিয়ে শাররীক নির্যাতন, ধর্ষন করা করছে। দলে দলে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে গ্রামের মানুষ। এ সমস্ত দৃশ্য দেখে সহ্য করতে না পেরে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য গোপনে গোপনে এলাকার যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করেন।
 ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষন শোনার পরে ঠিক করলেন মুক্তিযুদ্ধে যাবার। নিজেদের অধিকার আদায় করে নেবার  জন্য বাহিনী তৈরি করা প্রয়োজন। ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর ডাকে এপ্রিল মাসে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। তোবারক হোসেন লুডুর নেতৃত্বে দুই শতাধিক এলাকার যুবক নিয়ে একটি মুক্তি বাহিনী গঠন করেন। বাঘের মত সাহস এবং কৌশলে লোকমান একটি বেটাগান হাতে নিয়ে সকল যোদ্ধদের হাতে ভারি অস্র নিয়ে সকলে একত্রিত হয়ে মানিকগঞ্জে পাকিস্থানি হানাদারবাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় ও সফল যুদ্ধ করেন গোলাইডাঙ্গায়। যুদ্ধে যাবার আগে সহযোদ্ধাদের বলেন আমি ফঁায়ার করার পরে তোমরা ফঁায়ার করবে। ৭/৮টি নৌকায় করে পাকিস্থানি সেনারা  যখন ক্যাপের দিকে আসতে থাকে তখন পেছন দিক থেকে কৌশলে লোকমান ব্যাশ ফায়ার করেন। এবং একজন সেনাকে গেরিলারমত গলা চেপে ধরে তার অস্র নিয়ে আসে এবং তাকে ফাঁয়ার করে হত্যা করে। এই যুদ্ধে ৮১ জন পাকিস্থানি সেনা নিহত হয়। এখান থেকে সহযোদ্ধারা লোকমান হোসেনকে টাইগার লোকমান উপাধি দেয়।
  তোবারক হোসেন লুডুর নেতৃত্বে লোকমান, জাহিদ, লুৎফর, চাঁন মিয়া, ননী মিয়া, আঃ সালাম, ইয়াকুব, হারুন, ওয়াজেদ, হেকমত আলী প্রায় দের শতাধিক  মুক্তিযোদ্ধা ছিলো। পাকিস্থানি ক্যাম্পে প্রথম হামলা চালান হয়েছিল। এর পরে ২২ জুন ঘিওর থানা আক্রমনের পরে চারিগ্রাম লালডুবাই হানাদার বাহিনীদের আক্রমন করে এবং মানিকগঞ্জের পুলিশ ক্যাম্প আক্রমন করেন। ঢাকা- আরিচা সহাসড়কের নয়াডিঙ্গী  ব্রিজ অপারেশন, চারিগ্রামের  যুদ্ধসহ বেশ কয়েকটি যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশ গ্রহন করেন।  ২৯ অক্টোবর সিংগাইরে গোলাইডাঙ্গা ৩০/৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সরাসরি যুদ্ধের পরে বাস্তানবগ্রামে সরে পরেন। এ সময়  সবাই ছিল যুবক। পরে  ২ সেপ্টেম্বর টাইগার লোকমানকে  কমান্ডার করেন সহযোদ্ধারা।
টাইগার লোকমান জানান, মুক্তিযোদ্ধাকে জান নামে তার একটি সংগঠন রয়েছে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেন। তার বাড়িতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষন কেন্দ্র। এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় ৪ নেতা, ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া সহ প্রায় ৪ শতাধিক বিশিষ্ঠ ব্যক্তি বর্গের ছবি।
নতুন প্রজন্ম শিক্ষার্থীসহ অসংখ্য লোকজন দেখার জন্য ভীড় করেন।  মুলত ১০ হাজার টাকা ভাতার উপর নির্ভর করে চলে তার ২টি প্রোগাম। তার উপরে সংসারে বারো রকমের ঝামেলা নিয়ে চরম অর্থনৈতিক সংকটে কাটে তার প্রতিটি দিন।  তার পরেও বুকভরা ভালবাসা, আর শ্রদ্ধ রয়েছে সারা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি। বয়সের ভারে এখন বেশি চলাফেরা করতে পারেনা। বেশীর ভাগ সময় কাটে তার নিজের মুক্তিযুদ্ধের সংরক্ষন কেন্দ্রে।
মুক্তিযোদ্ধা টাইগার লোকমান হোসেন প্রধানমন্ত্রী উপহার দেওয়া বীর নিবাস একটি ঘর পেয়েছেন। সুন্দর একটি ঘরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সুখ শান্তিতে বসবাস করছেন।  প্রধানমন্ত্রীকে তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
 উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, মুক্তিযোদ্ধা টাইগার লোকমান একজন আদর্শবান মানুষ। নীতি ও নৈতিকতার বাইরে কখনও চিন্তা করেনা।  তিনি সম্মানী টাকার উপরে নির্ভর করে নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া নিজ বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষন কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন।
Facebook Comments Box

Posted ৫:২৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ মার্চ ২০২৪

Desh24.news |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০  
এম আজাদ হোসেন সম্পাদক ও প্রকাশক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

শ্রীসদাস লেন,বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০/ ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

হেল্প লাইনঃ +৮৮০১৯১১৪৭৭১৪১/০১৯১১২২৭৯০৭

E-mail: infodesh24@gmail.com