নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২০ মার্চ ২০২১ | প্রিন্ট
চাকুরি জীবনের শেষ সম্বলটুকু ছেলে,মেয়েদের দিয়ে নিজেই এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন নুরল ইসলাম (৯০)। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই মানুষটির ছেলে মেয়ে থাকলেও এখন শেষ আশ্রয়স্থল যাত্রী ছাউনিতে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে আশ্রয়হয় মেয়ের বাড়িতে। তার জমানো টাকা আত্মসাৎ করে মেয়েও তাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যের দেওয়া খাবার খেয়ে যাত্রী ছাউনিতে শুয়ে কোনো রকমে দিন কাটছে প্যারালাইস রোগে আক্রান্ত নুরল ইসলামের।
নুরল ইসলামের জন্ম হিন্দু এক পরিবারে। সেই সময় তার নাম ছিল বাবুলাল। বাবার নাম ছিল সিন্ধুলাল। ১৯৯০ সালে নভেম্বর মাসে আদালতের মাধ্যেমে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন তিনি। ১৯২৪ সালের ঢাকা শহরের সুত্রাপুর থানার ওয়ারি এলাকায় তার জন্ম হয়। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া লেখা করে আর এগুতে পারেনি।
গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রী ছাউনিতে গিয়ে দেখাযায়, ছাউনির ভেতরের মেঝেতে ছেঁড়া একটি বিঝানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন নুরল ইসলাম। কেউ পাশে এলেই কেঁদে কেঁদে বলছেন তার জীবনের কষ্টের কথা। পাশেই একটি লেপ আর ময়লাযুক্ত বালিশ রয়েছে। সেখানে রাখা আছে একটি শুকনো পাউরুটি আর একটি পানির বোতল। তার সারাশরীর একাধারে কাঁপছে । কেউ কাছে এলেই বার বার ডেকে কি যেন বলছেন আর কাঁদছেন।
সেখানেই কথা হয় নুরল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন তার পূর্বপুরুষ হিন্দু ধর্মের লোক ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার পর অভাবের কারনে কাজের খোঁজে কুষ্টিয়ায় যান তিনি,সেখানে কিছুদিন থাকার পর। পরে নব্বইয়ের দশকে সে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার জয়নগর এলাকায় চলে আসেন।
জীবনের স্মৃতি কথাগুলো বলতে গিয়ে বার বার কেঁদে ফেলছেন নুরল ইসলাম। তিনি বলেন,কুষ্টিয়া এলাকায় যাওয়ার পর এক হিন্দু ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করেন। পরে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আসার পর আদালতের মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সেই সময় কোর্টের ম্যজিস্ট্রেট ছিলেন কিরণ বাবু। ইসলাম ধর্মগ্রহণ করার পর তার নাম হয় নুরল ইসলাম।এর পর দিনাজপুর পল্লীবিদ্যুত-২ অফিসে ঝাড়—দার হিসেবে চাকুরি নেন তিনি। অফিস থেকে পাশের জয়নগর বাজারে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের জমিতে একটি ঝুপড়িঘর করে কোনমতে চলছিল তাদের সংসার।
নুরল ইসলাম কান্না বিজরিত কন্ঠে বলেন, ১৫ বছর ধরে ঝাড়—দারের চাকুরি শেষে অবসরের শেষ সম্বলটুকু তুলে দেন ছেলে ইউসুফ আলী ও মেয়ে রিনা বেগমের হাতে। বেশ কয়েক বছর ভালোই চলছিল। বছর তিনেক আগে প্যারালাইস রোগে আক্রান্ত হন তিনি। গত দেড় বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান। এরপর থেকে শুরু হয় তার দুর্বিসহ জীবন। এদিকে দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়ক প্রশস্ত করনের কাজ শুরু হলে তার বাড়িটিও ভাঙা পড়ে। পরে অসু¯ অব¯ায় তিনি ঠাঁই নেন মেয়ে রিনা বেগমের বাড়ি রাঙ্গামাটি সিন্দুর হাটায়।
নুরল ইসলাম বলেন,সরকারি সহায়তা বয়স্ক ভাতার কার্ডের টাকাগুলোও আমার মেয়ে আত্মসাৎ করে আমাকে একটি ভ্যান যোগে জয়নগর পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন আমাদের দেখার মত কেই নেই। রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখে ¯ানীয় লোকজন এই যাত্রী ছাউনিতেই এনে দিয়েছে। এখন এটাই আমার শেষ ঠিকানা। কেউ খাবার দিলে খাওয়া হয় না দিলে না খেয়ে থাকতে হয়। হাটতে পারিনা। টয়লেট করতে পারিনা। একটি হুইল চেয়ার খুব প্রয়োজন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন,৯০ বছর বয়সেও মোক আল্লাহ তুলে নেয়না কেন? বাঁচার ইচ্ছে আর নাই। মোর মরণ হওয়াই ভালো।
¯ানীয় জয়নগর বাজারের ব্যবসায়ী মশিউর রহমান জানান, নুরল ইসলাম এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাকে দেখান মত কেউ নেই। ছেলে মেয়ে থাকলেও তারা উনার কোন খোঁজ খবর রাখেন না। বাজারের মানুষ তাকে যতটুকু দেন তা খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছেন তিনি। সারা দিন কান্না করে। তাকে সরকারি সহায়তার বাড়িগুলো দিলেও একটা ঠাঁই হয়।
ফুলবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মিল্টন বলেন,নুরল ইসলামের অসহাত্বের বিষয়টি আমি শুনেছি। তার বিষয়ে দ্রুত ব্যাবস্হা গ্রহণ করে তাকে একটি হুইল চেয়ার প্রদান করা হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন,উনার বিষয়ে আগে আমার জানা ছিলনা। খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যব¯া গ্রহণ করা হবে।
জানতে চাইলে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী বলেন,‘নুরল ইসলামের বিষয়টি আসলেই অমানবিক। তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে খুব দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।ঘর পাওয়ার যোগ্যহলে সেটিরও ব্যবস্থা করা হবে।
Posted ৯:০২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২০ মার্চ ২০২১
Desh24.news | Azad
.