ডেস্ক রিপোর্ট | সোমবার, ০৯ আগস্ট ২০২১ | প্রিন্ট
সারাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার থেকে রাস্তায় চলবে গণপরিবহন। এ বিষয়ে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে অর্ধেক আসন ফাঁকা না রেখে সব আসনে যাত্রী নিয়ে সড়কে অর্ধেক গণপরিবহন চালুর যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তা মানতে রাজি নন পরিবহন মালিকরা।
তারা বলছেন, ‘অর্ধেক গণপরিবহন’ বাছাই করার মতো জটিল একটি প্রক্রিয়া বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং এ পদক্ষেপের ফলে পরিবহন মালিকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, শ্রমিকদের কষ্ট আরো বাড়বে। তাছাড়া সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকিতো আছেই।
লকডাউনের বিধিনিষেধ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রোববার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে ১১ অগাস্ট থেকে ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার উপর জোর দিয়ে’ প্রায় সব চালুর কথা বলা হলেও সব আসনে যাত্রী নিয়ে অর্ধেক গণপরিবহন সড়কে নামানোর সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সড়কে আসন সংখ্যার অর্থেক যাত্রী নিয়ে সব গাড়ি চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
অর্ধেক গণপরিবহন নামানোর সিদ্ধান্তটি ‘বিচক্ষণতার সাথে নেয়া হয়নি’বলে মনে করেন বাংলাদেশ বাস ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ।
সোমবার তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর সরকারের আগের সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করা সহজ ছিল। এবারের নির্দেশনা প্রতিপালন করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না।’
এমন মনে হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এই পরিবহন মালিক বলেন, ‘যেসব কোম্পানির অনেক বাস আছে তারা তাদের অর্ধেক বাস চালাতে পারবে। যেমন শ্যামলী ও হানিফসহ বেশ কিছু কোম্পানি আছে যারা অর্ধেক বাস চালাতে পারবে। কিন্তু যার একটা গাড়ি আছে তিনি এই নিয়ম কীভাবে মানবেন। একজনের একটি বাস এরকম লাখ লাখ মালিক রয়েছে। আমরা তাদের কীভাবে বলব অর্ধেক বাস চালাবেন?’
সোমবার এক বিবৃতিতে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চলাচলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সকল গাড়ি চলাচলের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এক মালিকের কয়টি গাড়ি আছে বা কতটা গাড়ি চালাচ্ছে দেশব্যাপী এবিষয়টি নির্ণয় করা একদিকে যেমন কঠিন হবে, অন্যদিকে শ্রমিকেরা বেকার থাকবে, তাদের কষ্ট লাঘব হবে না। মালিকরাও ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাছাড়া অর্ধেক গাড়ি চলাচলের ফলে পরিবহন সংকট দেখা দেবে এবং যাত্রীর চাপ বাড়বে। এতে করে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’
তবে ‘যত সিট তত যাত্রী নিয়ে চলাচলের’সরকারের নির্দেশনা মেনে বর্ধিত ভাড়া না প্রত্যাহার করে আগের ভাড়ায় গাড়ি চালানোর বিষয়ে ঢাকাসহ সারা দেশের পরিবহন মালিকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে এই পরিবহন মালিক নেতা জানান।
করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া লকডাউনের বিধিনিষেধ ১১ অগাস্ট থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তুলে নেয়া হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপনে সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস, যানবাহন, বিপণি বিতান ও দোকানপাট ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে’ চালু করা অনুমতি দেয়া হয়েছে। আর শিল্প কারখানা গত ১ অগাস্ট থেকেই খোলা রয়েছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার বা বিনোদনকেন্দ্র খোলার বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি।
হোটেল-রেস্তোরাঁর ক্ষেত্রে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখতে হবে। কিন্তু গণপরিবহনের সব আসনে যাত্রী নেয়া যাবে; প্রতিদিন মোট যানবাহনের অর্ধেক গাড়ি রাস্তায় নামানোর শর্ত দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর দেড় বছরে এখনই সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পার করছে বাংলাদেশে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ১ জুলাই দেশে লকডাউন জারি করা হলেও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে কোরবানির ঈদের সময় নয় দিন তা শিথিল করা হয়েছিল।
ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই থেকে আবার লকডাউন শুরু হলেও এর মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। এরপর ১ অগাস্ট সব রফতানিমুখী শিল্প কারখানা খোলার অনুমতি মেলে।
এখন আবার প্রায় সব কিছুই খুলে দেয়া হচ্ছে। তার উপর গণপরিবহনে সব আসনের যাত্রী নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
Posted ৭:৪২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৯ আগস্ট ২০২১
Desh24.news | Azad
.