শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

ঘিওরের ঐতিহ্যবাহী তেরশ্রী নিজামের মিষ্টি সুনাম রয়েছে দেশ জুরে ।। যাচ্ছে বিদেশেও

ডেস্ক রিপোর্ট   |   শুক্রবার, ২৪ জুন ২০২২ | প্রিন্ট  

ঘিওরের ঐতিহ্যবাহী তেরশ্রী নিজামের মিষ্টি  		সুনাম রয়েছে দেশ জুরে ।। যাচ্ছে বিদেশেও

রামপ্রসাদ সরকার দীপু স্টাফ রিপোর্টারঃ

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী নিজামের মিষ্টি সুনাম রয়েছে সারা দেশ ব্যাপি। ভোজন বিলাসিদের কাছে তেরশ্রী মিিিষ্টি ও দই অতি লোভনীয় খাবার। এ খাবার দেখলেই জিবে পানি আসেনা এমন ভোজন বিলাসি লোক খঁুজে পাওয়া যাবেনা। নিজামের মিষ্টি শুধু দেশেই নয় , বিদেশেও ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করছে। ইতোমধ্যে সৌদি, কুয়েত, কাতার ও মালেশিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে নিজামের মিষ্টি। দেশের বিভিন্ন স্থানে জামাই আদর,বিবাহ জন্মদিনের অনুষ্ঠান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রায় একশ বছরে ধরে তেরশ্রী নিজামের মিষ্টি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মিষ্টির পাশাপাশি দধি,ও ঘি খ্যাতি রয়েছে। গ্রাম বাংলার অনুষ্ঠান গুলোতে অতিথিদের আর্পায়ন করতে মিষ্টির বিকল্প নেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মিষ্টি কেনার জন্য বহু লোকজন তেরশ্রী নিজামের দোকানে আসেন। তবে বৃহস্পতীবার ও শুক্রবার বেশি লোকজন  মিষ্টি কেনার জন্য আসে। নিজামের মিষ্টির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই মিষ্টি ১৫ দিনেও নষ্ট হয়না। চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে অধিক মুনাফার কথা না ভেবে গুনগত মান ও সুনামকে ধরে রাখতে ঘিওরের তেরশ্রী নিজামের মিষ্টি ঐতিহ্য রয়েছে সারা দেশ ব্যাপি।


সাটুরিয়া উপজেলার হরগঞ্জ গ্রামে ১৯১৬ সালে মোঃ নিজাম উদ্দিন জন্মগ্রহন করেন। বর্তমানে বয়স ১০৬ বছর। পিতা প্রয়াত মোঃ শামসুদ্দিন । বাবা মার আদরের সন্তান ছিলেন নিজাম। আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় বেশি পড়াশুনা করতে পারেনি। ৮ম ম্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন।  বাবা মারা যাবার পরে ঘিওরের পয়লা ইউনিয়নের পয়লা পূর্বপাড়া গ্রামে এক আত্নীয়ের বাড়ি এসে বসবাস শুরু করেন। জীবনে বেচে থাকার তাগিদে তিনি একটি হোটেল শুরু করেন। এর পরে ১৯৪০ সালে তেরশ্রীতে বাজারে  মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন।  দীর্ঘ প্রায় ৫০ বছর তিনি মিষ্টি ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। দীর্ঘ ত্যাগ এবং কটোর অধ্যবসায়ের কারনে তার তৈরী মিষ্টি অল্প দিনে সারা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আজকে তার ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি, ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বরের সেই ভয়াল কাল রাত্রের স্মৃতি চারন করে  বলেন, পাকহানাদার বাহিনী ও এদেশীয় রাজাকার আলবদর, আলসামস বাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যে তৎকালিন জমিদার সিদ্বেশরী প্রসাদ রায় চৌধুরী এবং তৎকালীন কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩ জন গ্রামবাসিকে গুলি করে এবং বেয়নট দিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তেরশ্রী জমিদার শিদ্ধেশরী প্রসাদ রায় চৌধুরীকে হাত পা বেধেঁ পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে পুরিয়ে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। সমস্ত হিন্দু বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় পাকসেনারা। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। তিনি  নিহত ৪৩ জন পরিবারের কথা তুলে ধরেন। এখন বয়সের ভারে  তিনি আগের মত চলাফেরা ও  কাজকর্ম করতে পারেনা। স্মৃতি শক্তি লোপ পেয়েছে। অসুখ বিসুখ শরীরে বাসা বেঁধেছে। তাই ছেলে সাইফুল বতর্মানে বাবার পেশা বেছে নিয়েছে। সাইফুল  প্রায় ২০ বছর যাবৎ বাবার মিষ্টির দোকানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তিনি বলেন, আমার বাবা বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি তৈরি করতেন। তার কাছ থেকেই আমার মিষ্টি তৈরি করা শিখেছি। তিনি আমার ওস্তাদ। তবে আমার বাবা সততা, নিষ্টা ও পরিশ্রম করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। জীবনে কোন দিন মিথ্যা কথা বলেনি। অনেক কষ্ট দুঃখ করে তিনি আজকে ব্যবসাটি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বংশ পরস্পরতায় দীর্ঘ ৫০ বছর যাবৎ সুনামের সাথে এ ব্যবসা পরিচালনা করেন। বর্তমানে ১২জন কারিগর  নিয়ে তেরশ্রী, সিংজুরি, কুষ্টিয়া বাজার থেকে ভোর বেলা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ মন দুধ কিনতে হয়। ১২টার পরে দুধ এবং চিনি জালিয়ে মাওয়া তৈরি করা হয়।  তবে দুধ থেকে কোন ক্রীম বের করা হয়না। খঁাটি দুধ থেকেই সকল প্রকার মিষ্টি তৈরি করা হয়। বাবা সৎ ব্যবসায়ী ছিলেন। কাজেই খাবারের দ্রব্য সাগ্রীতে কোন ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করতেন না । বর্তমানে বড় মামা মিষ্টি ৩৪০টাকা, মিনিকেট মাওয়া মিষ্টি ৩৬০টাকা, রসগোল্লা বড় ২২০টাকা, রসগোল্লা ছোট ২৪০টাকা, মালাই চপ ৫০০টাকা, রসমালাই ৪০০টাকা, প্যারা সন্দেশ ৫০০টাকা, ট্রফি সন্দেশ ৬৫০টাকা,  প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০মণ দুধের মিষ্টি বিক্রি হয়।

মিষ্টির দোকানের একজন কারিগড় জানান,মিষ্টির অর্ডার দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় রাতদিন কাজ করতে হচ্ছে ২০ থেকে ২২জন কারিগরদের।  সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত।  বর্তমানে ঘিওর ও তেরশ্রীতে ২টি শোরুমে নিজামের মিষ্টি বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতী ও শুক্রবার বেশি মিষ্টি বিক্রি হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজোরিত ঐতিহ্যবাহী তেরশ্রীতে নিজামের মিষ্টি ভোজ্যপন্যের ধারা অধ্যবধি ধরে রেখেছে। মানিকগঞ্জ-ঢাকা- টাংগাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের পঞ্চরাস্তার পাশে দেশের দুরদুরান্ত এলাকা মানুষ যে কোন সময় এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এখান থেকে মিষ্টি নিয়ে যাবার প্রবনতা রয়েছে।

ঘিওর উপজেলার তেরশ্রীতে ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, চিকিৎসক, শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক ও কলামিস্টসহ বহুগুনিমান ব্যক্তিবর্গ জন্মগ্রহন করেন। ১৯৭১ সালে ৪৩জন শহীদদের স্মরনে বর্তমান সরকার ২০১২ সালে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে তেরশ্রী মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতিস্তম্টি নির্মান করেন। দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভটি দেখার জন্য প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নতুন প্রজন্মসহ বহু লোকজন আসে। পাশাপাশি নিজামের লোভনীয় মিষ্টি খাবারের জন্য ভির করে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন। বর্তমানে সারা দেশেই রয়েছে এ মিষ্টির চাহিদা।

 

 

Facebook Comments Box

Posted ৪:০১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২৪ জুন ২০২২

Desh24.news |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
এম আজাদ হোসেন প্রকাশক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

শ্রীসদাস লেন,বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০/ ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

হেল্প লাইনঃ +৮৮০১৯১১৪৭৭১৪১/০১৯১১২২৭৯০৭

E-mail: infodesh24@gmail.com