শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

গ্রাম্য মাতাব্বরদের নিদের্শে এসএসসি পরীক্ষার্থীর পরিবারকে একঘরে

আব্দুর রাজ্জাক মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি   |   শনিবার, ২০ মে ২০২৩ | প্রিন্ট  

গ্রাম্য মাতাব্বরদের নিদের্শে এসএসসি পরীক্ষার্থীর পরিবারকে একঘরে

মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার আগকলিয়া এলাকায় গ্রাম্য মাতাব্বরদের কথায় বিচারে উপস্থিত না হওয়ায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়েসহ মো.হানিফ কাজীর পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে। বাড়িঘর থাকতেও অন্যের বাড়িতে বসবাস করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ভুক্তোভোগীরা।

 


এঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রাম্য মাতাব্বরসহ ১২জনকে আসামী করে দৌলতপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী হানিফ কাজীর স্ত্রী নাছিমা আক্তার। এর আগে গত বুধবার (১০মে) স্থানীয় বিচারের মাধ্যমে একঘরের সিদ্ধান্ত দেয় স্থানীয় গ্রাম্য মাতাব্বররা।

 

অভিযুক্তরা হলেন, দৌলতপুর উপজেলার আগকলিয়া এলাকার আব্দুল বাতেন কাজী, মো.হাসেম আলী, মো. মুক্তার হোসেন, মো. ফুলবাহার, মোসাম্মত মুক্তা, ইউনুস কাজী, পাষান কাজী, শামসুল কাজী, হাসান কাজী, হারেজ কাজী, নজরুল কাজী ও আনসার কাজী।

 

ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান, বড় ভাই হালিম কাজীর বাড়ির লোহার গেটের কারনে ছোট ভাই বাতেন কাজীর অটোবাইক বাড়ির ভিতরে ঢুকতে না পারায় ঢাকার চাকুরীজীবি ভাইকে লোহার গেট ভেঙে দিতে বলেন ছোট ভাই বাতেন কাজী। বেশ কয়েকবার বলার পরও লোহার গেট না ভাঙায় স্থানীয় গ্রাম্য মাতাব্বরদের কাছে বিচার দেয় বাতেন কাজী। ঢাকায় চাকুরী করায় বড় ভাই হানিফ কাজীকে ফোন করে এবং বাড়ির রাস্তা স্থানীয়ভাবে মিমাংসার গতবুধবার তারিখ ঠিক করে স্থানীয়ভাবে বসার ব্যবস্থা করেন গ্রাম্য মাতাব্বররা। কিন্তু চাকুরীর কারনে আসতে না ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রাম্য মাতাব্বররা হানিফ কাজী ও তার পরিবারকে একঘরে করে। এরপর স্থানীয়দের হানিফ কাজীর পরিবারের সদস্যদের সাথে মিশতে নিষেধ করা হয় এবং হানিফ কাজীর পরিবারের সদস্যদের কাছে ক্রয়-বিক্রয় করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানাও করে গ্রাম্য মাতাব্বররা। সেই সঙ্গে হানিফ কাজীর বাড়ির রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেট এর সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে দেয় গ্রাম্য মাতাব্বররা।

 

ভুক্তভোগী নাছিমা আক্তার বলেন, চাকুরীর জন্য আমার স্বামী ঢাকায় থাকে। তাই বিচারের দিন আমরা কেউ বিচারে ছিলম না। এই রাগের গ্রামের মাতাব্বর ইউনুস কাজী, পাষান কাজীসহ বিচারে আসা লোকজনেরা মিলেমিশে আমাদের একঘরে করে দেয় এবং রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেট এর সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে দেয়।বেড়া দেওয়ার পর কয়েকদিন বাড়িতে ছিলম। কিন্তু রান্নাঘর, বাথরুম, টয়লেটের সমস্যার কারনে এবং মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার কারনে বাধ্য হয়ে গ্রামের পাশের এক আত্মীয়র বাড়িতে আশ্রয় নেই। বর্তমানে সেখানে আছি এবং মেয়েকে পরীক্ষা দেওয়াচ্ছি। গ্রাম্য মাতাব্বরদের কাছে গিয়েও বেড়া খুলে দিতে অনুরোধ করেছি। কিন্তু কাজ না হওয়ায় পরে থানায় অভিযোগ করেছি। আশা করি আইনের মাধ্যমে আমি সঠিক বিচার পাবো।

এসএসসি পরীক্ষার্থী হানিফ কাজীর মেয়ে তামান্না ইসলাম বলেন, বেড়া দেওয়ার পরও বেড়ার ফাঁক দিয়ে যাতায়াত করে কষ্ট করে কয়েকদিন ছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম, বেড়ার ফাঁকাও বন্ধ করে দিছে আর দোকানে গেলে দোকানদারও কথা বলেনা, কিছু বিক্রিও করেনা। পরে পরীক্ষা দিতে এবং জীবন বাঁচাতে পরিচিত এক চাচার বাড়িতে আমি আর মা আশ্রয় নিছি। ওই চাচার বাড়িতে থেকে এখন এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

অভিযুক্ত ইউনুস কাজী ও পাষান কাজী মাতাব্বর বলেন, গ্রামের মাতাব্বরদের কথা অমান্য করায় হানিফ কাজীর পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে। গ্রামে থাকলে গ্রামের মাতাব্বরদের কথা আগে শুনতে হবে, তার পর আইন মানতে হবে। এতে করে আইন অমান্য হলেও আমাদের কিছু করার নাই। দেখি হানিফ ও তার পরিবার আমাদের কি করতে পারে।

 

এবিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্লা জানান, অভিযোগের পর শুক্রবার বিকেলে উভয়পক্ষকে থানায় ডাকা হয়েছে। আলোচনা করে বিষয়টি মিমাংসা করা হবে। একঘরে করার মাধ্যমে আইন অমান্য হয়েছে বলেও ওসি জানান।

Facebook Comments Box

Posted ৮:০৮ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২০ মে ২০২৩

Desh24.news |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১  
এম আজাদ হোসেন প্রকাশক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

শ্রীসদাস লেন,বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০/ ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

হেল্প লাইনঃ +৮৮০১৯১১৪৭৭১৪১/০১৯১১২২৭৯০৭

E-mail: infodesh24@gmail.com