মাহবুব আলম রাসেল | রবিবার, ০১ আগস্ট ২০২১ | প্রিন্ট
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাঁতার দলের হয়ে ২১ বছর আন্তবাহিনী, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ১৫ টি স্বর্ণ ,৩৩ টি রৌপ্য ও ৪২ টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছেন । এত অর্জনের পরেও রয়ে গেছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে। কখনও তার ডাক পড়েনি জেলা ক্রীড়া সংস্থা কিংবা খেলাধুলার অন্য কোন আসরে।
বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলা শহরের পাশেই বান্দুটিয়া গ্রামে। জন্ম, ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারী, বয়স ৫৫ বছর।একেবারেই সহজ সরল নিরহংকারী একজন মানুষ। ১৯৮৪ সালের জুলাই মাসের ৮ তারিখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। যোগদানের একবছর পরই ১৯৮৫ সালে সেনা সাঁতার দলের সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৫ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত, টানা ২১ বছর সেনা সাঁতার দলের হয়ে আন্ত:ইউনিট, আন্ত:বিভাগ, আন্ত:বাহিনী, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত একটানা ছয় বছর সেনাবাহিনীর শ্রেষ্ঠ সাঁতারু নির্বাচিত হন। সেনাবাহিনীতে চাকুরীকালীন সময়ে ১৫টি স্বর্ণ, ৩৩টি রৌপ্য এবং ৪২টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন।
তিনি দেশের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনীকে এবং আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে দেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি সাঁতারের প্রায় সব ইভেন্টেই অংশগ্রহন করেছেন,তন্মধ্যে -২০০, ৪০০ ও ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইল, ২০০ ও ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলে, ৪ গুণন ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল, ৪ গুণন ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল রিলে এবং ওয়াটারপোলো।
তিনি আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে ১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সাফ গেমসে দুটি ব্রোঞ্জ এবং ১৯৯৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত চুতুর্থ সাফ গেমসে একটি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালে ভারতের মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত সপ্তম সাফ গেমসে একটি ব্রোঞ্জ এবং একই সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম সাফ দুরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতায় রৌপ্য পদক অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আর্ন্তজাতিক স্বাধীনতা কাপ ওয়াটার পোলো মিটে একটি স্বর্ণপদক ও একই বছর মুর্শিদাবাদে অনুষ্ঠিত ৫৪তম বিশ্ব দুরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সাঁতারে স্বর্ণপদক অর্জন করে দেশকে আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে সম্মানের সঙ্গে তুলে ধরেন।
জাতীয় সাতারু আসাদুজ্জামান ছালাম বলেন, আমি ২০০৫ সালে সার্জেন্ট হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর আমার নিজ জেলায় বসবাস করছি। আমি বর্তমানে একটি ফলের ও সবজির বাগান করেছি। আমার ইচ্ছে ছিলো জেলার শিশু-কিশোরদের সাঁতার শেখাবো। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাঁতার নিয়েই থাকতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার চাওয়াটা পূরণ হয়নি। একজন সাবেক জাতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে আমাকে আমার জেলার মানুষও ঠিকমত চেনে না। জেলা ক্রীড়া সংস্থায় বিভিন্ন ক্রীড়া বিভাগের খেলোয়ারদের ছবি টাঙানো থাকলেও আমার ছবি সেখানে স্থান পায়নি। নিজ জেলায় এমন স্বীকৃতির আশা আমি করতেই পারি। আমি টাকা-পয়সা চাই না সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই।
আমার দুই মেয়ে এবং এক পুত্র সন্তান রয়েছে। জ্যেষ্ঠ মেয়ে শাম্মী জামান একজন আইনজীবী, ছোট মেয়ে সামিয়া জামান সরকারী দেবেন্দ্র কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং একমাত্র ছেলে রাকিবুজ্জামান বেকার অবস্থায় রয়েছেন। স্ত্রী সামসুন্বনাহার একজন গৃহিণী।
সাঁতারু ছালামের বড় মেয়ে এড. শাম্মি জামান বলেন, আমার বাবা দেশকে অনেক কিছুই দিয়েছেন, বিনিময়ে পেয়েছেন অবহেলা। তার জীবনের অনেকটা সময় তিনি সাঁতারের পিছনে ব্যয় করেছেন। এখন অন্য কিছু সে ভালমত করতে পারে না। আমরা চাই নিজ জেলায় অন্তত তিনি সম্মান নিয়ে বেচেঁ থাকুক এবং জেলা ক্রিড়া সংস্থায় অন্যান্য জাতীয় খেলোয়াড়দের সাথে আমার বাবার একটা ছবি থাকুক।
জেলা ক্রিড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বাবু সুদেব কুমার সাহা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তার সনদপত্র সহ আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি সর্বাত্বক সহযোগিতা করবো। তিনি দরিদ্র হয়ে থাকলে ক্রিড়া সংস্থা বরাবর দরখাস্ত করলে আর্থিক সহায়তা করা হবে।ক্রিড়া সংস্থায় ছবি টানানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ছবি টানাতে আমার কোন সমস্যা নেই।জাতীয় খেলোয়াড়দের ছবি টানালে বরং ক্রিড়া সংস্থার মান বাড়ে।
Posted ১১:০৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০১ আগস্ট ২০২১
Desh24.news | Azad