সুলতান মাহমুদ, জয়পুরহাট প্রতিনিধি | মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট ২০২১ | প্রিন্ট
জয়পুরহাট জেলার ব্র্যান্ডিং লতিরাজ কচু দেশের চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশে। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। অন্য ফসলের চেয়ে এই ‘বারি লতিকচু-১’ জাতের কচুর চাষ বেশি লাভজনক। এ কারণে কচু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষকরা। তবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ব্যবসায়ীরা জানান, পাঁচবিবি পৌরসভার বটতলী এলাকায় স্থানীয়দের ভাড়া জায়গার লতি কচুর হাটে নানা সমস্যা নিয়ে চলছে তাদের প্রতিদিনের বেচা-কেনা। এ লতিরাজ কচু দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য প্রসেসিং প্ল্যান্ট নেই।
সরকারিভাবে প্রসেসিং প্ল্যান্ট করার প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগ। তবে কৃষক, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা চান লতিরাজ কচুর উৎপত্তিস্থল পাঁচবিবি এলাকায়। তাই প্রসেসিং প্ল্যান্ট ও সরকারিভাবে নিধার্রিত হাট পাঁচবিবিতে গড়ে তোলা হোক।
স্থানীয় ও জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাঁচবিবির মাটি অত্যন্ত ভালো হওয়ার কারণে উন্নত বারি লতিকচু-১ জাতের লতিরাজ কচু সহ অন্য জাতের কচু চাষ হয়। বারি লতিকচু-১ অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্মত হওয়ার কারণে দেশেও চাহিদা যেমন, বিদেশেও চাহিদা প্রচুর। প্রায় ৩০ বছর আগে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বটতলী এলাকা ও আশাপাশের কিছু গ্রামের কৃষকরা সীমিত পরিসরে নিজেদের পরিবারের সবজি হিসেবে লতিরাজ কচু চাষ শুরু করেন। নিজের পরিবারের সবজির চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের হাট-বাজার গুলোতে বিক্রি করছিলেন তারা। অন্য ফসলের চেয়ে লতিরাজ কচু চাষ করে বেশি মুনাফা হওয়ায় ঝুঁকে পড়েন এ চাষে। তারপরেই শুরু হয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ।
১৯৯৫ সালে পাঁচবিবির বটতলী এলাকায় স্থানীয়দের ভাড়া জায়গায় গড়ে তোলেন লতিরাজ কচুর হাট। ১৯৯৮ সালে
কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকদের নজরে আসে লতিরাজ কচু। এরপর লতিরাজ কচু কুয়েত, মালেয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর,সৌদি আরব, ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের ২৫ টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ইতিমধ্যে লতিরাজ কচুকে জয়পুরহাট জেলার ব্র্যান্ডিংও করা হয়েছে। বর্তমানে পাঁচবিবির বটতলী কচুর হাটে প্রকারভেদে লতিরাজ কচু ৩০ থেকে ৫০ টাকা দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক করোনা ও লকডাউনে এ ব্যবসায় কিছুটা মন্দা দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ মৌসুমে জেলায় লতিরাজ কচু চাষ হয়েছে প্রায় ১২৫০ হেক্টর জমিতে ও ফলন হয়েছে ৩৫-৪০ হাজার টন। ৪০ শতাংশ লতিরাজ কচু বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
পাঁচবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, এই লতিরাজ কচুর উৎপত্তি
পাঁচবিবিতেই। এ কচু বেচা-কেনার জন্য সরকারিভাবে নির্ধারিত কোনো হাট নেই। পৌর এলাকার বটতলীতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্দ্যেগে কচুর হাট গড়ে তুলেছেন। এখানকার কচু বিশ্ব বাজারে রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু এখানে প্রসেসিং সেন্টার নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রসেসিং করা হচ্ছে। সরকারিভাবে প্রসেসিং সেন্টার যেন পাঁচবিবিতে করা হয়। এতে এখানকার কর্মসংস্থান বাড়বে ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স,ম মেফতাহুল বারি বলেন, এই পাঁচবিবি মাটি অত্যন্ত ভালো হওয়ার কারণে উন্নত মানের লতিরাজ কচু চাষ হয়। এবং এই কচু অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সন্মত হওয়ার কারণে দেশেও চাহিদা যেমন, বিদেশেও চাহিদা প্রচুর। এখানকার উৎপাদিত ৪০ শতাংশ লতিরাজ কচু কুয়েত, মালেয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, ইউরোপ-আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া সহ বিশ্বের ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। জেলা কৃষি বিভাগ থেকে জয়পুরহাটে একটি প্রসেসিং প্ল্যান্ট করার জন্য প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Posted ৩:২৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৪ আগস্ট ২০২১
Desh24.news | Azad
.
.