বুধবার ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘিওরের তেরশ্রীর গণহত্যা দিবস আজ

ডেস্ক রিপোর্ট   |   শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ | প্রিন্ট  

ঘিওরের তেরশ্রীর গণহত্যা দিবস আজ

আল মামুন ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি :

আজ ২২ নভেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওরের তেরশ্রী গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তেরশ্রীর তৎকালীন জমিদার সিদ্ধেশ্বর রায় প্রসাদ চৌধুরী, তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩ জন স্বাধীনতাকামী মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। ওই সময় পুরো গ্রামের ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয় পাক সেনারা। সেই ভয়াল দিনের কথা মনে পড়লে আজও আঁতকে ওঠেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, ঘিওরের পয়লা ইউনিয়নের তেরশ্রী গ্রামের মানুষগুলো ছিল সাংস্কৃতিক মনা। বাম রাজনীতির কেন্দ্র বিন্দু ছিল তেরশ্রী গ্রাম। মুক্তিযোদ্ধাদের আনাগোনা ছিল জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী। ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর দোসররা টার্গেট করে এই গ্রামটিকে। গোপনে শিক্ষানুরাগী, মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবিদের তালিকা করে দালালেরা। নীল নকশা করে এই গ্রামটিকে ধ্বংস করার।


 

১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর ভোর কেটে সূর্য ওঠার মুহূর্তেই পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও দেশীয় রাজাকার ঘিরে ফেলে তেরশ্রী গ্রামের সেন পাড়ার কালি মন্দিরটি। ২১ নভেম্বর গভীর রাতে এদেশীয় দালালদের নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গোপনে একটি মিটিং করে তেরশ্রী গ্রামে সেনপাড়া কালিবাড়ী মাঠ প্রাঙ্গনে। তারা পরিকল্পনা করে ২২ নভেম্বর হত্যাযঞ্জের। ঘিওর থেকে সিধুঁনগর গ্রামের মধ্য দিয়ে শতাধিক পাকিস্তানি সেনা এদেশীয় ঘাতকদের সহযোগিতায় ভারি অস্ত্র নিয়ে তেরশ্রী গ্রামে পৌঁছে। কনকনে শীতের সকালে অনেকেই তখন ঘুম থেকে উঠেনি। ঠিক সেই মূহুর্তে পাকিস্তানি সেনারা অতর্কিত হামলা চালায় গ্রামটিতে। ঘরে ঘরে দেয় আগুন। ঘর থেকে বের হবার সুযোগ দেয়নি গ্রামবাসিকে। বৃষ্টিরমত গুলি ছুড়তে থাকে নিরীহ গ্রামবাসীর উপর। তাদের চিৎকারে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। অপারেশনের সময় এদেশীয় দালালরা মুখোশ পরে নেয় যাতে তাদের কেউ চিনতে না পারে। ৬ ঘন্টার অপারেশনে ঘাতকরা একের পর এক বেওনেট চার্জ করে এবং গুলি করে ৪৩ জন গ্রামবাসীকে হত্যা করে। বেলা ১২টার মধ্যে হত্যাযজ্ঞ শেষ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা চলে যায় ঘিওর সদরে। এই সময় পুরো এলাকা রক্তে ভেসে য়ায। লাশগুলো কোন রকম দাফন করা হয়। স্বাধীনতার ৫২ টি বছর অতিবাহিত হবার পরেও সেন পাড়া গ্রামের মানুষগুলো এই হত্যাকান্ডের বিচার পায়নি।

 

২০১১ সালের ২২ নভেম্বর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এর অধীনে শহীদদের স্মৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার্থে শহিদ স্মৃতিস্তম্ভটি নির্মিত হয়েছে ২৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে। সেই সাথে উন্মোচিত হয়েছে তেরশ্রীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।

 

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার ও তেরশ্রী শহীদ স্মৃতি পরিষদ উদযাপন কমিটির সভাপতি আব্দুল আজিজ জানান, ভাষা আন্দোলন,মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি আন্দোলনে তেরশ্রী গ্রামের কৃতিত্ব রয়েছে। তেরশ্রীতে ৪৩ জন শহীদদের স্মরনে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য লোকজন স্মৃতিস্তম্ভ দেখার জন্য আসে। প্রতিদিন যাত্রা পথে বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলারসহ গ্রামীন জনপদের মানুষ ঐতিহ্যবাহী তেরশ্রীতে এমন একটি নান্দনিক স্থাপনা দেখে মুগ্ধ হচ্ছে।

 

পয়লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ মোশাররফ হোসেন মানিক বলেন, ২২ নভেম্বর ভোর রাতে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে এদেশীয় রাজাকার আলবদররা মিলে তেরশ্রী গ্রামসহ আশপাশের চারটি গ্রাম জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। হত্যা করা হয় নিরীহ ৪৩ জন মানুষকে। তেরশ্রী কালি নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তার পাশে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।

 

 

ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে এ সময় উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা।

 

এসময় উপস্থিত ছিলেন ঘিওর উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি নুরজাহান আক্তার সাথী, উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর মানিকুজ্জান মানিক, যুগ্ম সম্পাদক মোঃ জানে আলম, পয়লা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ মোশাররফ হোসেন মানিক, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ।

Facebook Comments Box

Posted ১২:৩১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

Desh24.news |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  
এম আজাদ হোসেন সম্পাদক ও প্রকাশক
বার্তা ও সম্পাদকীয় কার্যালয়

শ্রীসদাস লেন,বাংলাবাজার , ঢাকা-১১০০/ ঘিওর, মানিকগঞ্জ।

হেল্প লাইনঃ +৮৮০১৯১১৪৭৭১৪১/০১৯১১২২৭৯০৭

E-mail: infodesh24@gmail.com