
এম রাসেল হোসাইন, সাটুরিয়। | শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১ | প্রিন্ট
পঞ্জিক আলীর ছেলে রাজ্জাক মিয়া (৫০) একজন দিনমজুর। তিন মেয়েসহ পাঁচ সদস্যের ছিল এক ছোট সংসার। অভাব অনটনের কারণে দুই মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। এখন আছে সবার ছোট এক মেয়ে কেবল মাত্র স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলীয়া ইউনিয়নের নাশুরপুর এলাকার ধলেশ্বরী নদীর তীরেই তাঁর বাড়ি। তিনি বললেন, সংসারের এটা-সেটা কাজ করে গভীর রাতে বিছানায় যাই। পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরলেই চোখে ঘুম চলে আসে। তবে হঠাৎ ভাঙনের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমভাঙা চোখে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এই বুঝি বাপের রেখে যাওয়া একমাত্র ভিটেবাড়িটুকুও সর্বগ্রাসী ধলেশ্বরীর ভাঙনে ভেসে যায়! এ ভাবেই পালাক্রমে জেগে থাকার লাড়াই আমাদের। হয়তো এবার ভিটেবাড়িটুকুও আর শেষ রক্ষা হবে না। তাঁর মতো ওই গ্রামের সবাই প্রায় একই আতঙ্কে ভুগছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভাঙনকবলিত ওই গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ধলেশ্বরী নদীর পানি বাড়তেই শুরু হয়েছে ভাঙন। ভাঙনের আতঙ্কে কেউ ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার প্রহর গুনছেন অনেকেই, বাইরের কোনো লোককে দেখলেই তাঁরা ঘিরে ধরেন। তাঁদের সামনে ভাঙন ঠেকানোর দাবি জানান তারা। তবে ভাঙন ঠেকানো কেবলই তাদের শান্তনা আর এ যেন সময়ের দাবি।
সরেজমিনে আরও জানা যায়, গত কয়েক বছরে অর্ধশতাধিক পরিবারের শত শত বিঘা ফসলি জমি, ভিটেবাড়ি সর্বগ্রাসী ধলেশ^রী গ্রাস করেছে। এবছরও ভাঙনের শুরুতেই হুমকিতে রয়েছে ১০টি পরিবার। নদীর তীর থেকে প্রায় এক শত ৫০ ফুট দুরেই রয়েছে মসজিদ, মন্দির, দোকানপাট ও জালশুকা-নাশুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙন তীব্র হলে রক্ষা পাবে না ওইসব ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটসহ আরও প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার এমনটিই ধারণা করছে এলাকাবাসী।
সংবাদ সংগ্রহ কালে এগিয়ে আসেন একই এলাকার নবা শেখের ছেলে শওকত আলী (৩৫)। তিনি বলেন, গতবছর বন্যায় আমার ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। অন্যের জায়গায় কোনরকম মাথা গুজার ঠাই পেয়েছি। আমার মত ভিটেবাড়িহীন আর কেউ যাতে না হয় তার জন্য দ্রুত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসন ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করছেন তিনি।
নাশুরপুর এলাকার নদী পাড়ের আব্দুর রহিমের স্ত্রী বলেন, “গাঙ ভাঙতে ভাঙতে আমাগো ঘরের পিছে আইসা পড়ছে। কুনসুম জানি ভাইংগা যায়। সখ কইরা ঘর পাকা করছি এবার মনে হয় আল্লাহ রাখবো না।” এ ভাবেই আহাজারি করে অভিযোগ করেন কেউ একবস্তা মাটিও দেয়নি ভাঙন রোধে। সরকারের কাছে ধলেশ্বরী নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনিও অনুরোধ জানান।
একই এলাকার মৃত রাম চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে সুকুমার চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমরা গোটা কয়েক হিন্দু সম্প্রদায় এখানে বাস করি। একটি মাত্র আমাদের মন্দির। নদী ভাঙন দেখতে দেখতে এবার মন্দির নিয়ে ভাবতে হচ্ছে আমাদের। ভাঙন রোধ করা না গেলে ফসলি জমি, বসতিভিটা তো নদীতে যাবেই শেষ রক্ষা পাবে না ধর্মশালা ও দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সামাদ মিয়া বলেন, অত্র ইউনিয়নের মধ্যে অবহেলিত এই নাশুরপুর। নদী ভাঙনে প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার গত কয়েক বছরে নিঃস্ব হয়ে গেছে। এবছরও রাজ্জাকসহ প্রায় ৮-১০টি পরিবার ভাঙন তীব্র হলেই ভিটেবাড়িহীন হয়ে যাবে। ভিটেবাড়ি গাছপালা হারিয়ে যেমন নিঃস্ব হবে তেমনী গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়বে। নদীর প্রায় একশত ৫০ ফুট দুরেই রয়েছে মসজিদ, মন্দির, দোকানপাট এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখনই ভাঙন রোধ করা না গেছে কচিকাচা ছেলে মেয়েদের শিক্ষা ব্যবস্থা অনিশ্চত হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. মতিয়ার রহমান জানান, নদী ভাঙন রোধের বিষয়ে উর্ধতন কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে।উনারা দ্রুত নদী ভাঙন রোধের প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল আলম বলেন,নদীভাঙন কবলীত স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা হালনাগাদ করে তাদের মধ্যে সরকারী সহযোগীতা ও নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
Posted ১০:০২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ জুলাই ২০২১
Desh24.news | Azad
.
.
আর্কাইভ
রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র | শনি |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | |||||
৩ | ৪ | ৫ | ৬ | ৭ | ৮ | ৯ |
১০ | ১১ | ১২ | ১৩ | ১৪ | ১৫ | ১৬ |
১৭ | ১৮ | ১৯ | ২০ | ২১ | ২২ | ২৩ |
২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২৮ | ২৯ | ৩০ |
৩১ |